গণবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় সোচ্চারের উদ্বেগ

সোচ্চারের লোগো ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ছবি
সোচ্চারের লোগো ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ছবি  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) শের আলী নামের এক শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে রাতভর র‍্যাগিং ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে সাভার উপজেলার পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকায় ঘটা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছেন সোচ্চার- টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ড. শিব্বির আহমদ ও সেক্রেটারি ড. মাহফুজুল হাসান।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সংগঠনটির মিডিয়া ও পাবলিকেশন ডিরেক্টর ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা বার্মিংহামের গবেষক শফিকুল ইসলাম মাহফুজের পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী গত ২৪ ডিসেম্বর সোমবার দিবাগত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী শের আলীকে একটি বাসায় ডেকে নিয়ে রাতভর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালায়। বর্তমানে উক্ত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সংগঠনটি বলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং, বুলিং ও মানসিক নিপীড়ন যেকোনো অবস্থাতেই অগ্রহণযোগ্য। এটি মানবিক মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, শাহজালাল, ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সোচ্চারের ছাত্রসংসদ নির্বাচন-পূর্ব জরিপে উঠে এসেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুন: মেসে ডেকে শিক্ষার্থীকে রাতভর র‍্যাগিং, হাসপাতালে ভর্তি

তারা আরও বলছে, দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সোচ্চার পরিচালিত আরেকটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নিড অ্যাসেসমেন্ট জরিপে উঠে এসেছে যে র‍্যাগিং, বুলিং ও কটুক্তি প্রতিরোধ শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয় এবং মানসিক নিরাপত্তা, সম্মানজনক পরিবেশ ও কার্যকর রিপোর্টিং সিস্টেমের অভাব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জটিল করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্যাতন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও পদক্ষেপগুলো এখনো অপ্রতুল। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা আমাদের আবারো সারাদেশে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতন মোকাবিলার কার্যকর নীতি ও কাঠামো তৈরির তীব্র প্রয়োজনকে স্মরণ করায়।

বিবৃতিতে সোচ্চারের পক্ষ থেকে ৫দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হল: অনতিবিলম্বে শের আলীকে নির্যাতনের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহপাঠীদের অভিযোগ এবং ঘটনাক্রমের প্রেক্ষাপটকে আমলে নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে; ভুক্তভোগীকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, গণবিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং, র‍্যাগিং, এবং শারীরিক ও মানসিক হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এবং প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিক্টিম সাপোর্ট সেল গঠন করে স্পষ্ট রিপোর্টিং মেকানিজম, কাউন্সেলিং সুবিধা এবং ক্যাম্পাস-ব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ, সম্মানজনক এবং নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জবিতে দোয়া মাহফিল

এর আগে, গত ২৫ নভেম্বর ‘মেসে ডেকে শিক্ষার্থীকে রাতভর র‍্যাগিং, হাসপাতালে ভর্তি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। সেই সংবাদ অনুযায়ী, নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- অন্তু দেওয়ান (২২), মেহেদী হাসান (২১), আশরাফুল (২২), আসিফ লাবিব (২৩)। তারা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শের আলী আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের (৩৩তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। আশুলিয়ায় একটি ভাড়া মেস বাসায় থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। এ সময় তারা র‍্যাগিং ও মারধরের সুষ্ঠু তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবি জানান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গতকাল বিকেলের দিকে প্রথমে আশরাফুলের বাসায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুদের ডেকে নেন অভিযুক্তরা। সেখানেই কথাবার্তার একপর্যায়ে প্রথমে তাকে হুমকি দেওয়া হলে তিনি বাসায় ফিরে যান। পরে রাতে আবার তাকে খিচুড়ি খেতে বাসায় ডেকে আনেন অভিযুক্তরা। খাওয়ার পর অন্যদের বিদায় দিলেও ভুক্তভোগীকে আটকে রাখেন তারা। এরপর রাত ৯টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত তাকে চর-থাপ্পড়, লাথিসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া তাকে উলঙ্গ করে মানসিক নির্যাতনও করা হয়। ভোরের দিকে সবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী বাসায় ফিরলে বন্ধুরা তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করেন।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!