প্রথাগত রাজনীতি সমর্থনযোগ্য হলে জুলাই অভ্যুত্থান হত না: পরিবেশ উপদেষ্টা

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা  © টিডিসি ফটো

প্রথাগত রাজনীতি আমাদের যা শিখিয়েছে, তা যদি সমর্থনযোগ্য হত, তাহলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হত না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, নতুন রাজনীতি কী হবে, তা রাজনীতিবিদদের ভাবতে হবে।

আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ৪র্থ সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা স্মরণ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আপনারা এমন একটা প্রজন্ম, যে প্রজন্ম ১৮ কোটি মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণ‌অভ্যুত্থানে আপনাদের যারা সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমর্থন জুগিয়েছেন, তাদের সকলকে আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

তিনি বলেন, আমরা সবাই দেশটিকে আরও ভালোর দিকে পরিবর্তন করতে চাই। কিন্তু কেউ বাক্সের বাইরে গিয়ে চিন্তা করি না। সবাই প্রমোশন ও বদলির জন্য তদবির করি। কিন্তু সবাই চাই সবকিছু নিয়মমত চলুক। দুটো একসাথে হবে না।

উপদেষ্টা বলেন, এ অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির সাথে এ প্রজন্মের সম্পর্ক নেই। এই প্রজন্ম আগের রাজনীতির ধরণ-ধারণ থেকে মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। তবে এই পরিবর্তনটা বিশ্বের কোথাও সহজ নয়। কারণ ক্ষমতাবানরা পরিবর্তন-ইচ্ছুক শক্তিটাকে আঘাত করতে থাকে, নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে থাকে। এই নেতিবাচক প্রচারণায় পা দিবেন না। আপনারা কী চান তা ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে যেমন লিখে রেখেছেন, তেমনি নিজের হৃদয়েও লিখে রাখেন।

তবে বৈষম্যহীন সমাজ তৈরি করতে প্রজন্মকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে পরিবর্তন চান, সে পরিবর্তন আগে নিজের মধ্যে আনতে হবে। নিজে পরিবর্তন হবেন না, আশা করবেন যে কোন একটা শক্তি এসে আপনাকে পরিবর্তন করে দিয়ে যাবে, তা হবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রথাগত রাজনীতি আমাদের যা শিখিয়েছে, তাই যদি সমর্থনযোগ্য হত, তাহলে জুলাই অভ্যুত্থান হত না। নতুন রাজনীতি কী হবে, তা রাজনীতিবিদদের ভাবতে হবে। এই প্রজন্ম নতুন করে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করছে, এটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু পুরাত্ন ধারাকে ভেঙে নতুন ধারা চালু করতে সমাজের নেতিবাচক প্রচারণার ধারাকে ভাঙতে হবে। নেতিবাচক শক্তি ইতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে। খুব সাবধানতার সাথে আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা নতুন মুখ চাই। এটি যেন আসতে না পারে, তাই নেতিবাচক প্রচারণা হয়।

বাংলাদেশের সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তা দুই-আড়াই বছরে পরিবর্তন সম্ভব হবে না। কারণ মানুষ তো আপনি বদলে ফেলতে পারবেন না। এজন্য নিয়ম বদলাতে হবে। প্রসেস ঠিক করলে আউটকাম ঠিক আসবে। একইসাথে প্রসেসটা ওরিয়েন্টেড হতে হবে। আমি দেখেছি, সরকারের এমন অবস্থা যে শুধু প্রসেস আর প্রসেস আর প্রসেস। একটা পদ্ধতি যেন ঠিক করে যেতে পারি, আমরা সে চেষ্টা করছি। কিন্তু এক বছরে বায়ুদূষণ বন্ধ করতে বললে তো হবে না। আমরা কাজ শুরু করতে পারব। 

সমাবর্তন বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার চারটা নদী বায়োলজিক্যালি ডেড। ওখানে কোনো প্রাণ বাঁচে না। ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু বুড়িগঙ্গার তলে যে ৫ ফুট পলি পড়ে আছে, সেটা তো তুলতে হবে। এজন্য কম্প্রিহেনসিভ একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা ঘোষণা দিয়ে যাব, পরবর্তী সরকার এটি করবে। যদি জলবায়ু পরিবর্তন আমরা ঠেকাতে না পারি, এই শতাব্দীর শেষে গড় তাপমাত্রা ১.৫ মাত্রা বেড়ে গেলে বিশাল অংশ সমুদ্রের তলদেশে চলে যাবে। যদি বাংলাদেশের মানচিত্র অপরিবর্তনীয় রাখতে চান, তাহলে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতেই হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্নাতকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবচেয়ে বড় জিনিস হল দেশ ও দেশের নাগরিকদের প্রতি তোমাদের কর্তব্য। মানুষের প্রতি দরদ থাকতে হবে। এখন দিনদিন মানুষের প্রতি সহানুভূতি কমে যাচ্ছে। কিন্তু দরদ, সহানুভূতি এবং পরার্থপরতা সবচেয়ে জরুরি।

তিনি বলেন, ডিসিপ্লিন আর পরিশ্রম লাগবে। একই সাথে স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে ভবিষ্যতে আমি কী করব। স্বপ্ন ছাড়া তোমরা এগোতে পারবে না। সর্বশেষ মানবতার সেবা করতে হবে। একটিমাত্র পৃথিবী, এটিকে যদি আমরা সাসটেইন না করি, তাহলে মানবজাতি এগোতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফারাহনাজ ফিরোজ, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউনুছ মিয়া এবং রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আব্দুল মতিন।


সর্বশেষ সংবাদ