রাতভর দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধ্বংসস্তূপে পরিণত একটি

সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধ্বংসলীলা
সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধ্বংসলীলা  © টিডিসি সম্পাদিত

আশুলিয়ায় অবস্থিত সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গায়ে থুথু পড়াকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কি, শিক্ষার্থীদের বাসায় ও ক্যাম্পাসে হামলা, সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ, উত্তেজনা এবং ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এমনকি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক অন্যটির কিছু শিক্ষার্থীকে আটকে রাখারও অভিযোগ উঠেছে।

সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ৯টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে সোমবার (২৭ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। এ ঘটনায় সিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানটিতে করা হয় লুটপাটও।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, রবিবার সন্ধ্যায় সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বসবাসরত ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামে এক বাসার সামনে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর ওপর সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল থেকে থুথু পড়ে। এ নিয়ে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ওই বাসায় (ব্যাচেলর প্যারাডাইস) হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের আবাসস্থল ব্যাচেলর প্যারাইজে
সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের হামলা

হামলার এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে হামলাকারী শিক্ষার্থীদেরকে ধাওয়া করে সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রক্টোরিয়াল টিম ও পুলিশ তাদেরকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানালে তারা ব্যাচেলর প্যারাডাইসের সামনে অবস্থান নেন। পরে দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসে।

এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে আসার সময় ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর ওপর  হামলা করার অভিযোগ উঠে। এতে পরিস্থিতি আরও উতপ্ত হয়ে উঠে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যা চলে ভোর রাত পর্যন্ত। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সিটি ইউনিভার্সিটির ৫ থেকে ৭টি গাড়িতে ভাঙচুর করেন ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি প্রশাসনিক ভবনেও ভাঙচুর চালান। এসময় তাদেরকে অগিকান্ড ঘটাতেও দেখা যায়। এ ঘটনায় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি উঠেছে। তাদের অনেকে বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং অনেকে এখনো নিচ্ছেন।

সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেন ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সোমবার সকালেও দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সবাই নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। তবে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতির স্বাভাবিকীকরণে কাজ করছে।

অন্যদিকে, এ সংঘর্ষের ঘটনায় অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিবৃতি দিয়েছে পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালাইয়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব)। তারা বলছে, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর যেমন ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে ড্যাফোডিলের মতো আপরাইজিং একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামেরও। কোনো অবস্থাতেই নিজেদের রেশারেশিতে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা স্বাভাবিক সমাধান না করে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থনের সুযোগ নেই।

সিটি ইউনিভার্সিটির একাধিক বাস ভাঙচুর করে
আগুন দেন ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

তারা আরও বলছে, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছৃঙ্খল যে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাদেরকেও যেমন আইনের আওতায় আনতে হবে, একই সাথে ড্যাফোডিলের যে সকল উগ্র উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আনতে হবে। উভয় পক্ষের কারও অন্যায় কর্মকান্ডকে নুন্যতম বৈধতা দেয়ার সুযোগ নেই। এরা উভয় পক্ষই উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।

মারধরের শিকার ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থী

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আর কবির দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এ ঘটনায় আজ সকাল ৫টায় কানেক্টেড হয়েছি এবং এখন পর্যন্ত কাজ করছি। আপাতত আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কাজ করছি। তদন্ত না হওয়ার আগ পর্যন্ত আসলে ঘটনার রুট কজ (আসল কারণ) সম্পর্কে বলতে পারছি না। তবে যতদূর শুনেছি, ঘটনার সূত্রপাত দুই শিক্ষার্থীর কথা কাটাকাটি থেকে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তাদেরকে উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি। আর অনেকে আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাছাড়াও, সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।

গতরাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সিটি ইউনিভার্সিটিতে তান্ডব চালায়। ভিসি, পোভিসির রুমসহ কিছু ছবি শেয়ার করা হল। ক্যাম্পাস পুরোপুরী ধ্বংস ও আমাদের কম্পিউটারসহ মুল্যবান সম্পদ লুটপাট।

সিটি ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী শাহাদাত কবীর বলেন, গত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সিটি ইউনিভার্সিটিতে তান্ডব চালায়। ভিসি, পোভিসির রুমসহ পুরো ক্যাম্পাস ধ্বংস ও আমাদের কম্পিউটারসহ মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করে নিয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান (অব.) - কে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।

 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ