গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের প্রস্তাব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ০১:২০ PM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৫, ০৫:৫২ PM
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিক দাবি পূরণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর থেকে উত্তরণের জন্য বিকল্প সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
সোমবার (১২ মে) ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তারা। এসময় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার প্রস্তাব করেন আলোচকরা।
অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ (এপিইউবি) এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একাডেমিকস্ (বিএসপিইউএ) এর যৌথ উদ্যোগে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল আলোচনায় মিডিয়া পার্টনার ছিল ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এপিইউবির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সবুর খান, বিএসপিইউএর প্রেসিডেন্ট ও ইউআইইউর প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী, আইইউবিএটির ভিসি প্রফেসর ড. আবদুর রব, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. কামরুল আহসান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. শাহজাহান খান, উত্তরা ইউনিভার্সিটি ভিসি প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা লেখা, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ডিন প্রফেসর ড. একেএম ওয়ারেসুল করিম, সিটি ইউনিভার্সিটির ডিন প্রফেসর ড. জুলফিকার হাসান। প্যানেল আলোচনায় মডারেটর এর দায়িত্ব পালন করেন এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিটির প্রফেসর ড. নেহরিন মাজেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এর বিবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক ড. ফারহানা ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসপিইউএ'র সেক্রেটারি ড. নাহিন মামুন।
এপিইউবির চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ সবুর খান বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। কারণ যখন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যাত্রা শুরু করে, তখন দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও মাসের পর মাস বন্ধ থাকত। ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু কার্যক্রম বন্ধ থাকত। আমি রাজনীতির বিপক্ষে না। তবে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে। তাদের মুক্তচিন্তা, ফ্যাসিলিটিজ, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য তাদের মধ্যে সার্ভে ফরম ছেড়ে দিয়ে তাদের চাহিদা বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের সাথে আমাদের একটা জেনারেশন গ্যাপ আছে। তবে শিক্ষকদের সাথে ছাত্রদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে। কারণ শিক্ষকদের কথা ছাত্রদের কাছে মন্ত্রের মতো করে কাজ করে।
বৈঠকে প্রফেসর ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী জানান, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার ঘটনা থাকলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সংস্কৃতি আগে কখনো ছিল না। শিক্ষার্থীদের যে দাবিগুলো যৌক্তিক, সেগুলো মেনে নেওয়া উচিত। এ প্রজন্ম রাতারাতি সফলতা দেখতে চায়। আমাদের নতুন জেনারেশনের সাথে খাপ-খাওয়াতে হবে।
আইইউবেটর ভিসি প্রফেসর ড. আবদুর রব বলেন, শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ দাবি ফ্যাসিলিটিজ রিলেটেড। এগুলো আমাদের দেখা উচিত। পাশাপাশি দেখা উচিত তাদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক। এটা সত্য যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমাদের মতো করে চালিয়েছি। কোনো প্রশ্ন আগে আসেনি। এখন নতুনদের ধ্যানধারণা আলাদা। তাদের মনমানসিকতা বোঝা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় তারা একসময় এসব বিষয় নিয়েও কথা বলা শুরু করবে। এরপর শিক্ষকরাও আন্দোলন শুরু করবেন।
প্রফেসর ড. কামরুল আহসান বলেন, ছাত্রদের মননের পরিবর্তন হয়েছে। তারা এখন সবকিছুতেই মন খুলে কথা বলতে চায়। ছাত্ররাজনীতিতে যেসব ঝামেলা হয়, সেসব বিষয় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদের অভিভাবককে ডেকে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। তখন অভিভাবকেরাই এই সমস্যাগুলো সমাধান করেছেন।
প্রফেসর ড. শাহজাহান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের এক্সট্রা কারিকুলামের মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে তারা অন্যান্য দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাবে না। আর আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই যাতে আমরা বিষয়গুলো বুঝতে পারি, সে বিষয়ে কাজ করার জন্য আমাদের লোক দরকার। আর শিক্ষক হিসেবে আমাদের স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। অনৈতিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, ভালোভাবে ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষায় নতুনত্ব নিয়ে আসা। অ্যাকাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন করা। কারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের সবকিছুই বুঝতে পারে। হয়তো তারা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে না। আর গতানুগতিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আমাদের বদলাতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা অযথা সময় নষ্ট করবে না এবং পড়াশোনামুখী হবে। রাজনীতি দূর করে গতানুগতিক প্রশ্ন করা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে আমাদের এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে রুটিন কাজ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এগোবে না। ভিন্ন কিছু নিয়ে আসতে হবে। গবেষণামুখী করে তুলতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
ভিসি প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা লেখা বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। এদের গুছিয়ে আনতে আমাদের সময় লাগবে। সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। আর শিক্ষার্থীরাও কম বুঝে না। সমস্যাগুলো নিয়ে যারা বুঝে তাদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে এবং অন্যান্য যারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে শুধু বিশৃঙ্খলার দিকে মনোনিবেশ করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারিকুলামেও বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে একটা ছেলেই যথেষ্ট।