‘গবেষণা আমার নিয়মিত কাজের অংশ’
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪৫ PM , আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৮ PM
বিশ্বজুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উদ্ভাবনে ব্যতিক্রমী অবদান রাখা শীর্ষ গবেষকদের নাম সম্প্রতি প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’। বিশ্বজোড়া পরিচিত এলসেভিয়ারের সমন্বিত এ জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৩ জন শিক্ষক।
গবেষকরা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীর্ষ ২ শতাংশ অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিবছর বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘এলসেভিয়ার’ কর্তৃপক্ষ।
‘‘আমাদের এখান থেকে মেধা চলে যাচ্ছে। গুটিকয়েক দৃঢ়চেতা ব্যক্তি ছাড়া এখানে বেশির ভাগ গবেষক বা অধ্যাপকরা নিজের মতো করে কাজ করতে পারেন না অথবা পদ-পদবি নিয়েই বেশি চিন্তায় থাকেন’’—ড. আল সাকিব খান পাঠান, অধ্যাপক, স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউআইইউ।
চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিজ্ঞানীদের ২২টি বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র এবং ১৭৪টি উপ-ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধ করে মোট ২ লাখ ১০ হাজার ১৯৯ জন গবেষককে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। র্যাংঙ্কিংয়ের স্কোপাস ইন্ডেক্সড আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মোট ১৭৭ জন সেরা গবেষকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
এ বছর শীর্ষ গবেষকদের এ তালিকায় থাকাদের একজন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধ্যাপক ড. আল সাকিব খান পাঠান। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ক্ষেত্রে গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি এ তালিকায় অবস্থান নিশ্চিত করেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস। ফাইল ছবি।
অধ্যাপক ড. আল সাকিব খান পাঠান অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ২০০৯ দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ং হি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাস থেকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তার প্রায় শতাধিক গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে।
পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন ড. পাঠান। সম্প্রতি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে তার সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। গল্প-আলাপে গবেষণা-মগ্ন এই শিক্ষক বলেন, আইসিটি খাত নিয়ে গবেষণা করেছেন এ তালিকায় এমন ২৭জন রয়েছেন। এটা আমার জন্য একটি স্বীকৃতি। এটি আমার নিয়মিত কাজের একটি অংশ, একে আমি কোনো অর্জন বলতে চাই না।
আরও পড়ুন: বিশ্বসেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় ইউআইইউর তিন গবেষক
গবেষণাকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আল সাকিব খান পাঠান জানান, আমার প্রধান কাজের ক্ষেত্র নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি। আমি নতুন নতুন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি এবং আমি প্রতিনিয়তই শিখছি। আমার কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গবেষণা। মৌলিক (ফান্ডামেন্টাল) গবেষণার বিষয়গুলোকে সহায়তা করা।
‘‘আমি গবেষণা করতে ভালোবাসি এবং গবেষণায় থাকতে চাই। আমি ইউআইইউ কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা আমাকে গবেষণা চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহায়তা করেছে। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি; গবেষণা করে যাচ্ছি এবং এটি অব্যাহত রাখতে চাই।’’
গবেষকরা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে শীর্ষ ২ শতাংশ অবস্থানের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিবছর বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘এলসেভিয়ার’ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে ভালো মানের গবেষণা করার ক্ষেত্রে ভালো মানের শিক্ষার্থী বা গবেষক থাকে না জানিয়ে অধ্যাপক ড. পাঠান বলেন, বিশেষ করে আমাদের এই কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে অন্তত মৌলিক গবেষণার জন্য, খুব বেশি অথবা ব্যয়বহুল অবকাঠামো দরকার হয় না। কিন্তু আমাদের পিএইচডি স্তরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অথবা প্রায় সবাই বিদেশে চলে যায় অথবা যেতে বাধ্য হয়।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের এই সিএসই বিষয়ে খুবই কম সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের অনুমোদন আছে। আবার অনুমোদন থাকলেও এইসব স্থানীয় ডিগ্রির গুণমান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে কারণ আমাদের দেশের অধ্যাপকরা অনেক বাহ্যিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন, যেমন রাজনীতি অথবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দ্বারা প্রকৃত পিএইচডি কাজের মূল্যায়ন অথবা অবমূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ আছে।
আরও পড়ুন: এমআইটি-হার্ভার্ডের মতো গবেষণাগারের সুযোগ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে
‘‘ফলে আমাদের এখান থেকে মেধা চলে যাচ্ছে। গুটিকয়েক দৃঢ়চেতা ব্যক্তি ছাড়া এখানে বেশির ভাগ গবেষক বা অধ্যাপকরা নিজের মতো করে কাজ করতে পারেন না অথবা পদ-পদবি নিয়েই বেশি চিন্তায় থাকেন। প্রায়ই দেখা যায়—নিম্ন যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ দ্রুত অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছে। যখন একজন গবেষক শক্তিধর ব্যক্তিদের বৃত্তের চারপাশে থেকে ‘নজরে’ পড়তে চান, তার মেধা তখন ওই শক্তিধর ব্যক্তিদের পছন্দনীয় কাজ করতেই নিযুক্ত থাকে।’’
আবার দেখা যায়—যারা ফলিত (অ্যাপ্লাইড) গবেষণা করতে চান, অনেক সময় ব্যয়বহুল গবেষণাগার স্থাপন করেন, উদ্বোধন করান ক্ষমতাধর ব্যক্তি দিয়ে কিন্তু পরে ওইটা জাদুঘরের মতো হয়ে যায়-যন্ত্র পড়ে থাকে, বাইরে থেকে লোক এসে অবকাঠামো দেখে অবাক হয়, চালক শিক্ষার্থী থাকে না বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণার বাতিঘর ইউআইইউ’র সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ
‘‘পিএইচডি স্তরের শিক্ষার্থী না থাকলে, একটা উল্লেখযোগ্য সময় ধরে কোন মৌলিক অথবা ফলিত গবেষণা সঠিকভাবে করা কঠিন কারণ ওই স্তরের শিক্ষার্থী তার ডিগ্রির জন্য, অনেকটা সময় ধরে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা ও অনুসন্ধান করতে পারে, যেটা একজন অধ্যাপকের জন্য ঐভাবে ব্যয় করা সম্ভব না। বরং একজন প্রকৃত গবেষক অধ্যাপক পিএইচডি স্তরের শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে নির্দেশনার পাশাপাশি তার নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ বিশেষায়িত জ্ঞান প্রদান করতে পারেন’’—যুক্ত করেন অধ্যাপক ড. পাঠান।
গবেষণার জন্য কারো দিকে তাকিয়ে থাকেন না জানিয়ে এই গবেষক বলেন, এখানে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অসম্ভব নয়। ইউআইইউ এখানে আমাকে সব ধরনের সহায়তা করছে এবং আমি কাজ করছি।
গল্প-আলাপের শেষদিকে সামনের দিনে আরও বেশি গবেষণায় সংযুক্ত থাকার কথা জানান অধ্যাপক ড. আল সাকিব খান পাঠান। আগামীর পরিকল্পনা হিসেবে এই শিক্ষক জানিয়েছেন—গবেষণাকর্মেই নিজের মতো করে যুক্ত থাকতে চান এই অধ্যাপক।