সিটি ইউনিভার্সিটি ৪র্থ সমাবর্তনে সনদ পেলেন ৯৫৯২ শিক্ষার্থী

সিটি ইউনিভার্সিটির ৪র্থ সমাবর্তন
সিটি ইউনিভার্সিটির ৪র্থ সমাবর্তন  © টিডিসি ফটো

দেশের বেসরকারি খাতের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিটি ইউনিভার্সিটির ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ মে) সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ সমাবর্তন শুরু হয়। 

এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট ৩ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর'স স্বর্ণপদক এবং ৯ জন শিক্ষার্থীকে ভাইস চ্যান্সেলর'স স্বর্ণপদক দেয়া হয়। চ্যান্সেলর'স স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ইংরেজি বিভাগের সাদিয়া আফরিন তোয়া, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আফসানা রহমান ইতি এবং ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আফরোজা খানম। এছাড়াও সমাবর্তন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি অনুষদ এবং বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের অধীনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের বিভিন্ন ব্যাচের মোট ৯ হাজার ৫৯২ জনকে সনদ প্রদান করা হয়৷

সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ও সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়াও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নবীন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এই দিনে আপনাদের বাবা মা এবং শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন৷ কারণ তারা আপনাদের এই ডিগ্রি অর্জনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার এমন বাংলাদেশ তৈরি করতে চায়, যেখানে কোন ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য থাকবে না। যেখানে থাকবে না কোন বেকারত্ব। সরকার বাংলাদেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়, যেখানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানি করতে পারবে। খুব কম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখতে কৃষি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করায় আমি সিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানাই৷ 

New Project - 2024-05-11T154649-221

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী

তিনি গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আজ আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করলেও কর্মক্ষেত্রের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তাই আমি বলব, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ছুটতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থাপনা এবং যোগাযোগে যে দক্ষতা অর্জন করেছেন, সেটি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য প্রস্তত হতে হবে। আমরা যেন পিছিয়ে না থাকি, তাই ছোট ছোট কাজেও নিজেকে যুক্ত করতে হবে। শুধু আয়ের জন্য নয় বরং অভিজ্ঞতার জন্য এটি প্রয়োজন। 

গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ব কর্ম জগতে এখন অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেটের চেয়ে অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সমগ্র পৃথিবীতে এখন এপ্রেন্টিশীপ, আর্টিকেলশীপ ও ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স এই বিষয়গুলির উপর জোর দেয়া হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে প্রায়োগিক দক্ষতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হওয়ার জন্য অসাম্প্রদায়িকতা ও নারী পুরুষ সমতা প্রভৃতি মূল্যবোধগুলি নিজেদের মাঝে প্রতিপালনেরও আহবান জানান তিনি।

ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, গ্রাজুয়েটদের বলব আপনাদের ভাষা শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। জাতিসংঘের অফিশিয়াল যে ভাষাগুলো আছে সেগুলো আত্মস্থ করতে হবে। যেকোনো ভাষাই হোক, আরবি, ফ্রান্স, জাপানি কিংবা ইংরেজি। ভাষা একটি প্রযুক্তিগত দক্ষতা। এটা না থাকলে বিশ্ববাজারে নিজেদের উপযোগী হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন না। আমাদের ভাষার ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা আছে সেটা স্বীকার করতে হবে। সেটা স্বীকার করেই দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী হতে হবে।

প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের অনেককে দেখা যায় গেমিং করে সময় ব্যয় করেন, যিনি গেমিং করেন তিনি কিন্তু কোন আয় করতে পারেন না। তবে যিনি গেম তৈরি করেন তিনি আয় করেন। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি কনজিউমার হবো, নাকি প্রডিউসার হবো। ইন্টারনেটে অনেক কোর্স আছে সেগুলো আত্মস্থ করতে হবে। এখন আপনাদের সনদের প্রক্রিয়া শেষ, তবে লাইফলং শিক্ষার ইচ্ছে যেন এখান থেকেই শুরু হয় সে আহ্বান রাখছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এবং সিটি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আহসানুল ইসলাম টিটু, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার (অব:) জেনারেল অধ্যাপক ড. মো. লূৎফর রহমান।

CU Convocation

সমাবর্তনে গ্রাজুয়েটরা

সমাবর্তন বক্তা ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়োগিক শিক্ষার ক্ষেত্র অনেক প্রসারিত হয়েছে। যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ রয়েছে, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার। এই সরকারের আমলে স্মার্ট প্রযুক্তি আরও বেশি প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে মনে রাখতে হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য কোন মুনাফা অর্জন নয়। সেটির প্রতি মনোযোগ থাকতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার বিস্তার হয়েছে স্থানীয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সরকারি উদ্যোগ সেখানে অনেক পরে যুক্ত হয়েছে। সেখানে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে জমি পেয়েছে। যা পরবর্তীতে তাদের স্থানীয় পর্যায়ে এবং শিল্পখাতে জ্ঞান বিতরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে একটা নিবিড় যোগসূত্র তৈরি হয়েছে৷ 

আরেকটি দিক মনে রাখতে হবে, শিক্ষার লক্ষ্য শুধু দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন নয়, বরং তাতে মানবিক বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। সমাজে একটি প্রচলিত উক্তি রয়েছে, লেখাপড়া শিখেছে কিন্তু মানবিকতা শেখেনি। সার্টিফিকেট অর্জনের পর যাদের মানবিক গুণাবলি বিকশিত হয় না, এটি তাদের জন্য প্রযোজ্য। তাই আমি বলব, আপনারা যে যোগ্যতা অর্জন করেছেন সেটি শুধু ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বার্থে ব্যবহার করবেন না। বরং আপনারা এটিকে সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য ব্যয় করবেন। আজ যারা সনদ পেয়েছেন, নিজ যোগ্যতা দেশ ও সমাজের কল্যাণে ব্যয় করবেন সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

এসময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আজকের গ্রাজুয়েটরা আগামী দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন। অধিক পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করা বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যানিফেস্টো। সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত থেকে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। তবেই দেশের অগ্রগতিতে আপনাদের বলিষ্ঠ অবদান থাকবে। আমি মনে করি, আপনারা নৈতিকতার সাথে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, সিটি ইউনিভার্সিটির এই সমাবর্তনকে আমি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করি। সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। সকল শিক্ষা শ্রেণি কক্ষে অর্জন সম্ভব নয়। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার মাত্র ৩০ শতাংশ অর্জন করা যায়। বাকি জ্ঞান পুরো জীবন জুড়ে অর্জন করতে হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করলেও জ্ঞানের মহাসমুদ্রে প্রবেশের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। তোমরা যখন কর্মক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করছ, তখন পৃথিবী অনেক দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। তাই দক্ষতা অর্জনে সক্রিয় হতে হবে। যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমেই এই দেশ এবং সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে। তোমাদের যাত্রা শুভ হোক। 
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সিটি ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence