‘প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সংকটে ফেলছে’

ইউআইইউতে ড. জাহিদ হোসেন

বক্তব্য রাখছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন
বক্তব্য রাখছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন  © টিডিসি ফটো

কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিম্নমুখী হওয়ায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সংকট তৈরি করেছে। তবে এ অবস্থা থেকে বের হতে দেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে এবং সংকট থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিগত দুর্বলতার কারণে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশের ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক আয় বাড়ানো সম্ভব না হলে এটি আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

রবিবার (৩ মার্চ) বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: একটি সংকটকালীন মুহূর্ত’—শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ইউআইইউ’র স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের উদ্যাোগে উচ্চশিক্ষালয়টির ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশ কর্পাস: পাবলিক লেকচার সিরিজ-২০২৪’ এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২২ এর মধ্যে বাংলাদেশে কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং একই সময়ে দেশের শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমেছে—এটি অনেকটা ধাঁধার মতো কাজ করেছে। 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটাপন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডলার সংকট, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনীতিতে এসব সংকট তৈরি হয়েছে। এটি একক কোনো দেশের জন্য বা অর্থনীতির জন্য সংকট নয় বরং সবার জন্য। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরনে একেক দেশ বা অর্থনীতি একেক রকম নীতি গ্রহণ করেছে এবং তারা সফলতা পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং নীতিগত জটিলতার কারণে সংকট ঘনীভূত হয়েছে।

ডলারের দাম—প্রভাব বৃদ্ধি, বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা অর্থনীতির উপর বড় চাপ জানিয়ে ড. জাহিদ বলেন, সমাধান হিসেবে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। তবে বাংলাদেশের নিজস্ব পলিসির পাশাপাশি দাতা সংস্থা এবং সহযোগীদের ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শের কারণে মৌলিক কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এটি ডলার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

তিনি বলেন, মহামারির আগে উদ্বৃত্ত, পরে সংকট তৈরি হয়েছে দেশের রিজার্ভে। রেমিট্যান্স কমার ফলে এটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে সংকট তৈরি করেছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। এরকম নয় যে—তারা দেশে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে, তারা টাকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছে ইনফরমাল চ্যানেলে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে এসব অর্থ দেশে আসছে। 

আমাদের মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ার ফলে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদের পরামর্শ, সংকট সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে সময়মতো। দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরানো এবং বৈদেশিক আয় বাড়ানোর পরামর্শও তার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি টাকা ছাপিয়ে সরকারকে অর্থ প্রদান করেছে—তারা সরাসরি সরকারি ডিপোজিটে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে এবং ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে তা কিনেছে। ফলে বাজার থেকে টাকা উঠে গিয়েছে এবং টাকা অবস্থানকে কমিয়ে দিয়েছে। সেজন্য ড. জাহিদ হোসেনের পরামর্শ ডলারের দাম বাজারের উপরই ছেড়ে দেওয়ার।

বিশ্বব্যাংকের সাথে নিজের দীর্ঘ ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতারা কথা মনে করিয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটি আগে কখনোই হয়নি— একটি দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে তিন রকম সমাধান এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের সংকটে তা হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ফয়জুল কবির। এছাড়া অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence