সংযুক্ত আরব আমিরাতে শাখা ক্যাম্পাস খুলতে চায় বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৩৬ PM , আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১৬ PM
উপসাগরীয় অঞ্চলে লাভজনক শিক্ষার বাজার ব্যবহারের লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কার্যক্রম শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
সম্প্রতি বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম ২০২৩-এ দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তারা এ তথ্য জানান। শিক্ষামেলাটিতে শত শত প্রবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অংশগ্রহণ করেন। গত ১৪ ও ১৫ অক্টোবর দুবাইয়ের দেইরার ক্রাউন প্লাজায় ফোরামের দ্বিতীয় সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৩০টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের জন্য একমাত্র আন্তর্জাতিক শিক্ষা রোডশো। দেশের এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১৪ হাজারের বেশি বিদেশি এবং ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।
দুবাইভিত্তিক মার্কেটিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক রিলেশনস ও মিডিয়া সংস্থাগুলোর জোট প্যান এশিয়ান গ্রুপ এবং ঢাকা ভিত্তিক ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং পরামর্শ সংস্থা স্পাইরাল ওয়ার্ল্ড এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম আয়োজিত হয়। এতে সহযোগিতা করে অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশ (এপিইউবি)। অনুষ্ঠানে টাইটেল স্পন্সর হলো আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)।
ফোরামে সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি অনেক শিক্ষার্থীরা দেশীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এর ফলে তারা বিশ্বমানের শিক্ষার পাশাপাশি দেশজ আবহ পায়। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অংশগ্রহণ নেই। ফলে যেসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেশজ আবহ চান তারা তা চাইলেও পান না। যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি বেশি রয়েছে সেখানে দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান শুরু করলে ওই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হতে পারবেন। পাশাপাশি সরকারও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন মাধ্যম পাবে।
আয়োজকরা বলেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য চারটি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি এখন টাইমস হায়ার এডুকেশনের ১ হাজার র্যাঙ্কিংয়ের আওতায় এসেছে। তাদের মধ্যে কঠোর প্রতিযোগিতার কারণে পাঠদান ও পাঠ্যক্রমের মান দ্রুত উন্নতি করায় আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৩৯টি পাবলিক, ৫৮০টি প্রাইভেট স্কুলে মোট ২৫ হাজার অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) শিক্ষার্থী এবং ১০ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের কাছে বাংলাদেশের সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এবারের আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
ফোরামের অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং প্রতি বছর এ খাতে বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়ছে। এ কারণেই আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখতে পাচ্ছি যা ভালো মানের মানব সম্পদ তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের শিক্ষার মান আরও উন্নত করতে হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে যাতে তারা সমাজের সকল ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে ও অবদান বাড়াতে পারে। অনেক বাংলাদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও আকৃষ্ট করছে এবং আমি আশা করি তারা জিসিসি দেশগুলোর (সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমান) শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারবে যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হতে চায়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ শিক্ষাখাত সম্প্রসারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের তৈরি করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমে মান উন্নয়ন হয়েছে বলে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত ও স্মার্ট জাতি হিসেবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা আরও আন্তর্জাতিক ফোরাম এবং ফোকাসযুক্ত আলোচনা দেখতে চাই যাতে আমরা তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি এবং তাদের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারি।
অনেক বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে। তারা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে অংশীদারিত্ব খুঁজছে।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এআইইউবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ঘোষণা করে বলেন, আমরা জিসিসির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে স্বাগত জানাই। এআইইউবিতে একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম রয়েছে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের দ্বারা চালু করা স্টার্ট-আপগুলোর অর্থায়নের জন্য এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হতে সহায়তা করে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিস অব এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিক’র (এইউএপি) প্রেসিডেন্ট এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, বাংলাদেশ ভাল মানের উচ্চ শিক্ষার একটি কেন্দ্র হিসেবে উদীয়মান। বিদেশি ছাত্র আগামী বছর বহুগুণ বাড়বে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চমানের এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শিক্ষাসেবা প্রদান করায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সর্বনিম্ন টিউশন ফিতে ভালো মানের শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয়। ড্যাফোডিলের ক্যাম্পাসে ২২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের শিক্ষার মানবৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয়।
প্যান এশিয়ান মিডিয়ার সিইও এবং বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরামের সংগঠক সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষার ল্যান্ডস্কেপে একটি বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম-২০২৩ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট যা উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রোফাইল তুলে ধরছে।
তিনি বলেন, এই বছর জিসিসি দেশগুলোতে স্কুল-ছাত্রের মোট সংখ্যা এক কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলো এই বাজারের একটি ক্ষুদ্র অংশকেও আকর্ষণ করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। শিক্ষা তখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি খাত হয়ে উঠতে পারে। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে।
আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল এবং সাধারণ কলেজগুলো ৪৬ লাখ ছাত্রছাত্রী শিক্ষা সেবা প্রদান করতে পারবে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে। অর্থাৎ বছরে এক হাজার ডলার করেও তারা খরচ করলে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বাজারের আকার ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণে এটি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে ও বাড়বে। এছাড়া দেশের শিক্ষা খাতে বর্তমানে ৩ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে যা ক্রমবর্ধমান।