বছরে প্রাথমিকের ছুটি এখন ৭৫ দিন, কতদিন কমছে?

দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি কমছে
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি কমছে  © টিডিসি সম্পাদিত

দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটির সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করার কথা জানিয়েছে সরকার। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

বর্তমানে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরে গড়ে ৭৫ দিন ছুটি দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন আন্দোলন, দুর্যোগ বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত ছুটি যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ছুটি ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষকরা আগের দাবি না মানা পর্যন্ত ছুটির নতুন সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে জানিয়েছেন।

উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, শিক্ষক-ছাত্রের সঙ্গে কতটুকু সময় দিতে পারছেন, সেটি আমাদের দেখতে হবে। মাত্র ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকছে। অপ্রয়োজনীয় ছুটি কমানো হতে পারে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনই থাকছে। এ ছুটি অন্যভাবে সমন্বয় করা হবে।

এর আগে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সভায় ছুটি কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) বেগম বদরুন নাহার সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা নিরসনে যা জানালেন উপদেষ্টা

এতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছুটি কমানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তবে মাউশির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো সম্মতি দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বিশেষ উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে পারে না, যা শিক্ষার মান ও ধারাবাহিকতায় প্রভাব ফেলছে। এ কারণে ছুটি কমিয়ে শিক্ষার সময় বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রস্তাবটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পর্যালোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে তা পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে নিয়মিত পাঠদান জরুরি। তবে ছুটি কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মতামত এবং বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। 

ছুটি কমানোর আগে কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শামসুদ্দিন মাসুদ। তিনি রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ছুটি কমানোর আগে আমাদের বিভাগকে নন-ভ্যাকেশনাল ঘোষণা করতে হবে। এখন ভ্যাকেশনাল থাকায় অবসরের পর অনেক সুবিধা পাই না। এ ছাড়া আমাদের তিন দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তাও মেনে নিতে হবে।’ অন্যথায় ছুটি কমানোর সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় দিবস, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সহ ৭-৮ দিন ছুটি থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। প্রধান শিক্ষকের হাতে সংরক্ষিত ছুটি ৩ দিন, যা কখনো শিক্ষকরা ভোগ করেন না বা করতে পারেন না।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!