গোপালগঞ্জে কারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করল, প্রশ্ন আসকের

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)  © লোগো

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক সমাবেশে হামলা ও সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে সংগঠনটি প্রশ্ন তুলেছে—পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করলে কারা সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করল? আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) আসকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। 

আসকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপি’র পূর্বঘোষিত রাজনৈতিক সমাবেশে হঠাৎ করে উত্তেজনা তৈরি হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ সেখানে হামলা চালায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ করে এবং প্রকাশ্যে গুলি চালায়। এতে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১) ও ইমন (২৪) নিহত হন। আহত হন আরও অনেকেই।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়, মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণভাবে সভা সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে নিশ্চিত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের দায়িত্ব হলো এই অধিকার সুরক্ষা করা এবং যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সময়ে উত্তেজনা প্রশমন ও মানুষের জীবনরক্ষা নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। গোপালগঞ্জে যেভাবে জনসাধারণের ওপর বলপ্রয়োগ ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং সংবিধান- উভয়েরই চরম লঙ্ঘন, যা একান্তই অগ্রহণযোগ্য।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে বলেছেন, পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেনি। এ প্রেক্ষাপটে আসক প্রশ্ন তুলেছে—তাহলে ভিডিওচিত্রে যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে, তা কারা করল? আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশে স্থিতিশীলতা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযম, ধৈর্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান- এই ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি পরবর্তীতে যেন কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানি বা সহিংসতার শিকার না হন এবং নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আসক জোর দিয়ে বলছে, এই ঘটনায় নিহত চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না। অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র নেতৃবৃন্দ ও সমর্থকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। একইসাথে এ ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। 

আসকের মতে, এই ধরনের বলপ্রয়োগ, গুলি চালানো ও প্রাণহানির ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি এক ধরনের হুমকি। নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব। গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। 


সর্বশেষ সংবাদ