ইউনূস-তারেক বৈঠক: সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে গুরুত্ব চায় এনসিপি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১০:৩৬ AM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:০৬ AM
আগামীকাল শুক্রবার লন্ডনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, এই বৈঠকে নির্বাচন কবে হবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার এবং জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট।
চার দিনের সফরে মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তার এই সফরের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকটিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই আলোচনা সফল হলে নির্বাচনকাল নির্ধারণ, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার এবং জুলাই সনদের মতো বিষয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যকার মতানৈক্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
তবে এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা মনে করছেন, আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠবে সাংবিধানিক সংস্কার, আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়মুক্তির অবসান ও বিচার নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষিত কাঠামোগত পরিবর্তন। তারা স্পষ্ট করেছেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকলে সেই বৈঠকের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
দলটির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মানুষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শুধুমাত্র ভোটাধিকারের জন্য রাস্তায় নামেনি বা জীবন দেয়নি। তারা রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন চেয়েছে। বিএনপি যদি কেবল ক্ষমতার হিসাব কষে আর এই দাবিগুলো পাশ কাটিয়ে চলে, তাহলে জনগণ আবার নিজের পথ খুঁজে নেবে।”
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এটি দেশের রাজনীতিতে একটি মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
তবে এনসিপি অপেক্ষাকৃত সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “বৈঠকের বাস্তব প্রতিক্রিয়া, মানে এর পরবর্তীকালে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দেখেই বোঝা যাবে এই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে।”
এনসিপির মতে, সরকার ও বিএনপির মধ্যে বর্তমানে যে দূরত্ব ও উত্তেজনা রয়েছে, তা নিরসনের একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে ইউনূস-তারেক বৈঠক। তবে দলটি বারবার বলছে, এটি কেবল তখনই সফল বিবেচিত হবে, যখন বিএনপি সরাসরি মৌলিক সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক বিচার ব্যবস্থার প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নেবে।
আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জনগণকে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে বিএনপির স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া—তারা কি জনগণের কাঠামোগত পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করবে, নাকি কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনই তাদের লক্ষ্য।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূস-তারেক বৈঠকের সফল পরিণতি হলে নির্বাচনের সময় কিছুটা এগিয়ে আসতে পারে এবং রাজনৈতিক পরিবেশে শীতল হাওয়া বইতে পারে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “এই বৈঠক দেশের রাজনীতিতে নতুন সুবাতাস আনবে।”