অন্তর্বর্তী সরকারের কিংস পার্টি হলো বিএনপি, বললেন যুবশক্তির আহ্বায়ক

তারিকুল ইসলাম
তারিকুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে বিএনপি। যার হলে প্রকৃতপক্ষে কিংস পার্টি হলো বিএনপি। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিংস পার্টি বিএনপি’ শীর্ষক এক লেখায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

রবিবার (১ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন তারিকুল ইসলাম, যিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্যতম নেতা তিনি। অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলামের ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিংস পার্টি বিএনপি’ শীর্ষক লেখাটি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো: 

“অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। কিন্তু এই সরকার নিরপেক্ষ নয় বরং সকল রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অংশীদারিত্বের সরকার।  ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে রয়েছেন তারা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব হিসেবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা।

৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনে আপত্তি জানায় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয় তখন বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তালিকা নিয়ে এই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। শুধু সরকার নয়, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগের সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক বোঝাপড়া করেই সেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই রাজনৈতিক বোঝাপড়া সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কিছুক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যুক্ত ছিলেন।

এখন প্রশ্ন হলো গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে দুজন উপদেষ্টা পরিষদে আছেন তারা এনসিপির প্রতিনিধি কিনা! একইসাথে যারা বিএনপি মনোনীত হয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আছেন তারা কি বিএনপির কিনা!  বা যারা বিএনপির মনোনয়নে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ পুলিশ ও শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ দায়িত্বে আছেন তারা বিএনপির কিনা!

উত্তর হলো, যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে, নিয়োগ হয়েছে সেহেতু এই সরকারের বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অংশীদারত্বের সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দুজন গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র প্রতিনিধি বাদের বাকি সবাই বিএনপির তাঁবেদারি মেনে নিয়েছে। শুধু মানেনি দুজন ছাত্র উপদেষ্টা। যার দরুন এই দুজন এখন বিএনপির গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভুলে গেলে চলবে না,  বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল যারা দুটি দলই ৩-৪ বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পতন হওয়ার সর্বক্ষেত্রে অঘোষিতভাবে বিএনপি দখলে নিয়েছে। কিছু জায়গা বিএনপি দখল নিতে পারেনি যাদের মধ্যে দুজন হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম।

সেজন্য তারা সকল ক্ষেত্রে এই দুজন উপদেষ্টাদের সাথে এনসিপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যারা গণ-অভ্যুত্থানের মূল নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সম্পর্ককে সহ্য করতে পারছেন না। তাদের সাথে দুই উপদেষ্টার উঠাবসা, কথাবার্তাকে রাজনৈতিক যোগসূত্রের মধ্যে ফেলছেন যেটি শুধুই বিএনপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছেন।

আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে, বিএনপির নেতাকর্মীরা সচিবালয়ে গিয়ে গত ৯ মাস প্রতিদিন ওপেন বসে থাকলেও সেটি জনতার দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি, আনা হয়নি বাকি সকল উপদেষ্টাদের সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক।  আনা হয়নি বিএনপির রানিং মানবাধিকার সম্পাদক ও তারেক রহমানের ব্যক্তিগত উপদেষ্টাকে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রদান করে বিএনপি কর্তৃক বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের খবর। আনা হয়নি রাষ্ট্রীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক জায়গাগুলো বিএনপির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দলীয় লোকদের নিয়োগের খবর।

সকল সমীক্ষা বিবেচনা করে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিংস পার্টি।  জিয়াউর রহমানের আমলেও বিএনপি যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন রাষ্ট্রীয় সকল কাঠামোতে এতো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি যতটা তারা পেরেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমান বাস্তবতা অনুসারে আপনি কীভাবে অগ্রাহ্য করবেন যে, বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিংস পার্টি নয়!

কিন্তু দেখুন সামনে আনা হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানের দুজন প্রতিনিধি যারা উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন তাদের সাথে তাদের গণ-অভ্যুত্থানের সতীর্থদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। কারণ একটাই সেটি হলো এই দুজন উপদেষ্টা বিএনপির জমিদারি মেনে নেয়নি, তাঁবেদারি করেনি। 

বিএনপি কর্তৃক সারাদেশে সকল সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোতে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে জমিদারি কায়েম করেছে এবং আরো করতে চাচ্ছে, এর মাশুল বিএনপিকে গুনতে হবে শীঘ্রই। মনে রাখা প্রয়োজন, আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে এ দেশের মানুষকে এবং রাষ্ট্রকে গোলাম বানিয়ে জমিদারি কায়েম করতে চাওয়ার পরিণাম ২৪ এর রক্তক্ষয়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থান।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence