তিন প্রজন্মের নায়িকা সুচিত্রা সেন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:২৫ PM , আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৪৬ PM
প্রেম, ভালোবাসা ও শুদ্ধাচরণের দীপ জ্বেলেছিলেন সুচিত্রা সেন। রোমান্টিসিজমের যে ভেলা তিনি ভাসিয়েছিলেন সেই ভেলায় চড়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্তত তিন প্রজন্মের দর্শক। চলচ্চিত্রপ্রেমী আশি-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ থেকে ১৮ বছরের তরুণও তার মৃত্যুতে যেন প্রেমিকা হারিয়েছেন। এপার বাংলার মেয়ে রমার এ মহাপ্রস্থানে দুই বাংলার তরুণরাও যেন হারিয়েছেন পাশের বাড়ির মিষ্টি মেয়েকে। ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের এ মেয়েকে হারিয়ে অগ্নিপরীক্ষা’য় রাজি তরুণরা আজ শুধুই ‘হারানো সুর’ খুঁজে বেড়ায়
২০১৪ সালে সুচিত্রা যেদিন মারা যান; সেদিন এক সাক্ষাৎকারে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নাহিদ জানিয়েছিলেন, ‘সুচিত্রার মৃত্যুতে তার দাদা ও বাবার মন খারাপ। মন খারাপ তার নিজেরও।’ নাহিদের এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা খুঁজলে সুচিত্রাকে তিন প্রজন্মের নায়িকা বলাই যায়।
পুরো নাম চিত্রা সেন। জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিনি মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল; কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক নিবাস।) পাবনা জেলার সদর পাবনায় সুচিত্রা সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন এক স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী। ১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাঁদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। ১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। তিন সপ্তাহ আগে ফুসফুসে সংক্রমণের জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষকৃত্যে গান স্যালুট দেবার কথা ঘোষণা করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠান।