নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঐশী হলেন নির্বাচনের প্রার্থী

ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নেত্রী ঐশী ঘোষ
ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নেত্রী ঐশী ঘোষ  © কলকাতা২৪

ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঐশী ঘোষ এবার জামুড়িয়া বিধানসভায় সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম-এর প্রার্থী হয়েছেন। সিএএ, এনআরসি, এনপিএ নিয়ে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রবল আন্দোলন চলছিল, তখনই রোগা-পাতলা চেহারার বাঙালি তনয়া আলোচনায় আসেন। দেখলো সত্যের পথে থাকার জন্য কী প্রবল পরাক্রম সেই ছোট্ট মেয়েটির।

মাথায় লাঠির আঘাতেও তাঁকে দমাতে পারা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় ঐশী ঘোষের সম্পর্কে তখন বলেছিলেন, ‘মাথায় একটা বাড়ি পড়েছে, তাতেই এত কথা, এত রাজনীতি!’ নিজের শহর দুর্গাপুরে মিছিল করার অনুমতি পাননি ঐশী ঘোষ । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের দুটো গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ঐশী ঘোষকে সেখানে সভা করতে দেওয়া হবে না বলে।

বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ঐশীকে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আরএসএসের দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছে। তার পরেও লড়াইয়ের ময়দানে এসে দাঁড়িয়েছে মেয়েটি। বাংলার গর্ব ঐশী।’

বিধানসভার জবাবি ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেছিলেন, ‘দিল্লি থেকে কে এসেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সভা করতে পারেনি, তা-ই নিয়ে এত কথা? আপনারা যখন বলেন, আপনারা সব ভুলে যান! মনে আছে, হাজরা মোড়ে সিপিএম মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল? আমি ৩৪ বছরে অনেক কিছু দেখে নিয়েছি।’ বাংলায় এখন যে কোনও দল যেমন খুশি সভা-মিছিল করতে পারে এবং অন্য রাজের তুলনায় এখানে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত বলেও সেদিন বিধানসভায় দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের দরজায় দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামে মনোনয়ন পেশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরই রাজ্যে আক্রান্ত হতে হলো। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অভিযোগ করলেন তাঁকে পরিকল্পনা করে আক্রমণ করা হয়েছে। তিনি যখন আক্রান্ত হচ্ছেন তখন তার সামনে পুলিশ ছিল না। ছিলেন না পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার।

এ ঘটনা যে দিন ঘটে সেদিনই জামুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ঐশী ঘোষের নাম ঘোষণা করছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ঐশীর জন্য খোলা রইলো বিধানসভায় প্রবেশের সুযোগ। যদি জামুড়িয়ার মানুষ তাঁকে সমর্থন দেন, তাহলে ঐশী বিধানসভায় প্রবেশ করতে পারবেন।

গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিধানসভায় ঐশী ঘোষের নাম না করে সমালোচনা করেন, তখন ঐশী ঘোষ হাওড়াতে এসএফআই-র মিছিল করেন। ওই মিছিল থেকে জেএনএউএসএউ-এর সভানেত্রী ঐশী ঘোষ বলেছিলেন, ‘এখানকার রাজ্য সরকার বলছে, তাঁরা সিএএ-র বিরুদ্ধে। অথচ এই রাজ্যেই আবার যখন আমরা সিএএ আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াইটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি, তখন বাধা দেওয়া হচ্ছে। সিএএ-র বিরুদ্ধে যে সব দল আন্দোলন করছে, তাদের কর্মসূচিকে আটকে দেওয়ার অর্থ বিজেপি বা আরএসএসকে সুযোগ করে দেওয়া!’

পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সভা করতে গিয়েও বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে ঐশী বলেছিলেন, ‘যদি ৩৪ বছরে মত প্রকাশের স্বাধীনতাই না থাকত, তা হলে তৃণমূল ক্ষমতায় এল কী করে?’

সেই ঐশী ঘোষ জামুড়িয়ার সিপিএম প্রার্থী। সিপিএম এবার তরুণ প্রজন্মকে সামনের সারিতে এনেছে। সেজন্য ঐশী এবার প্রার্থী হয়েছে। এমন সময় ঐশী রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন যখন রাজ্য রাজনীতি একটা সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখা যাক জামুরিয়া ঐশীকে ফেরায় না কাছে ডেকে নেয়। খবর: কলকাতা২৪।


সর্বশেষ সংবাদ