প্রেসিডেন্ট পদ হারাচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প

  © ফাইল ফটো

অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মানে হচ্ছে এখন তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যেতে হবে না। বুধবার ঐতিহাসিক এক ভোটাভুটির মাধ্যমে সিনেটে দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে না সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে এই মুক্তি পেয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ওই বিচার প্রক্রিয়ায় মি. ট্রাম্পকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া না দেয়ার বিষয়ে ভোট দেন সেনেটররা। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তার পদচ্যুতির বিষয়ে ৫২-৪৮ ভোটে জিতেছেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে, কংগ্রেসের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে প্রেসিডেন্টের পদ হারানোর সম্ভাবনা খারিজ হয়েছে ৫৩-৪৭ ভোটে। কোন কারণে ট্রাম্প ভোটে হেরে গেলে তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হতো। এর আগে ডিসেম্বরে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প হবেন প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যিনি অভিশংসিত হয়েছেন।

ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তার নির্বাচনী প্রচারণা দল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ট্রাম্প পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন এবং এখন আমেরিকার জনগণের নিজ কাজে মন দেবার সময় হয়েছে। অকর্মণ্য ডেমোক্র্যাটরা জানে তারা ট্রাম্পকে হারাতে পারবে না, সেজন্য তারা তাকে ইমপিচ করেছিল।’

বিবৃতিতে বলা হয়, অভিশংসন প্রক্রিয়া ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণার একটি কৌশলমাত্র। একে আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ‘ধাপ্পাবাজি’র একটি বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

এদিকে এ সপ্তাহে অ্যামেরিকান ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৪৯ শতাংশে উঠেছে, যা এ যাবতকালে তার জনপ্রিয়তার হারে সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার এ ব্যপার নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য দেবার কথা রয়েছে।

উটাহর সেনেটর মিট রমনি ছিলেন একমাত্র রিপাবলিকান যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের নিরাশ করেছেন অন্য দুইজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সেনেটর মেইনের সুসান কলিনস এবং আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা নিজের পক্ষ ত্যাগ করেননি।

কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করলেও, তাদের বক্তব্য হচ্ছে সেটা ইমপিচ করার পর্যায়ে যায়নি। প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য সেনেটের ১০০ আসনের মধ্য থেকে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পড়ার দরকার হতো।

ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা বলেছেন, এর ফলে ট্রাম্প আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘ট্রাম্প অ্যামেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সব সময় একটি ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং রিপাবলিকান সেনেটররা আইন না থাকার ব্যাপারটিকে সাধারণ ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন।’

সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ যাত্রা রেহাই পেলেও সবাই জানেন তার ত্রুটিসমূহ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি ইমপিটমেন্ট বা অভিশংসিত হয়েছেন।

এই অভিশংসনকে কেন্দ্র করে মার্কিন জনগণের মধ্যে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদেরা। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ফাঁস হওয়া ফোনালাপে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট।

ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে। এরপর তাকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয় ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ। সেখানে অভিশংসিত হওয়ার পর এবার সেনেটে চূড়ান্ত বিচারের মুখোমুখি হন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্টের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ১৯৯৮ সালে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তার আগে ১৮৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনটন কিম্বা জনসন তাদের কাউকেই সিনেটে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। খবর: বিবিসি।


সর্বশেষ সংবাদ