উগান্ডা থেকে নিউইয়র্কের মেয়র: কে এ মামদানি?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫ AM
উগান্ডা থেকে নিউইয়র্ক—এভাবেই ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেট সমর্থিত জোহরান মামদানি। ৩৪ বছর বয়সী এই অঙ্গরাজ্য আইনপ্রণেতা হবেন নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র এবং শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। গত গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রাণবন্ত প্রচারণার মাধ্যমে অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। তার সমর্থকরা মনে করেন, মামদানি এক নতুন প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তার নেতৃত্বে নিউইয়র্ক আরও সমতা, ন্যায় এবং সাশ্রয়ী জীবনের শহরে পরিণত হবে।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। তিনি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সে পড়াশোনা শেষে বোউডয়িন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে পড়ার সময় তিনি “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” এর ক্যাম্পাস শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। তার মা মীরা নায়ার একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং বাবা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার বাবা-মা দুজনেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তার স্ত্রী ২৭ বছর বয়সী ব্রুকলিনের সিরিয়ান শিল্পী রামা দুয়াজি, যার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল ডেটিং অ্যাপ “হিঞ্জ” এর মাধ্যমে।
মিলেনিয়াল প্রজন্মের এই প্রগতিশীল নেতা তার বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়কে শহরের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐক্যের বার্তা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রচারণায় উর্দু ও স্প্যানিশ ভাষায় ভিডিও প্রকাশ করেন; একটি ভিডিও পুরোপুরি উর্দু ভাষায় তৈরি করা হয় এবং তাতে বলিউডের সিনেমার দৃশ্য যুক্ত করা হয়, আরেকটিতে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। তিনি তার মুসলিম পরিচয়কে প্রচারণার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন, নিয়মিত মসজিদে গেছেন এবং শহরের উচ্চ জীবনযাত্রার খরচের সংকট নিয়ে উর্দু ভাষায় একটি প্রচারণা ভিডিও প্রকাশ করেছেন। বসন্তের এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে, একজন মুসলিম হিসেবে জনসমক্ষে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে বিসর্জন দিতে হয়।’
আরও পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে জয়ী জোহরান মামদানি
তার প্রধান নীতি ও প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাশ্রয়ী বাসস্থান নিশ্চিত করা, সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে পাবলিক বাস সেবা চালু করা এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জন্য সর্বজনীন শিশুসেবা চালু করা। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আবাসন খাতের একজন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং কুইন্সে স্বল্প আয়ের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতেন। তার স্টেট অ্যাসেম্বলি প্রোফাইলে লেখা রয়েছে, ‘জীবন যখন অনিবার্য দিকে মোড় নিচ্ছিলো—সিনেমা, র্যাপ আর লেখালেখির বাঁকবদলে—যাই হোক না কেন, সবসময়ই সংগঠন করা তার মাঝে এক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। যে কারণে বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ তাকে হতাশা নয়, বরং কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
৩৩ বছর বয়সী মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার কাছাকাছি চলে আসেন এবং পঁচানব্বই শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যায় তিনি ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর চেয়ে এগিয়ে আছেন; ২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করা কুওমো পেয়েছেন ৩৬ শতাংশ ভোট। নিউ ইয়র্কের র্যাঙ্ক-চয়েস ভোটিং পদ্ধতির কারণে চূড়ান্ত ফলাফলে পরিবর্তন ঘটতে পারে, তবে মামদানির এগিয়ে থাকা স্পষ্ট। তার এই জয়কে তৃণমূল পর্যায়ের বড় সমর্থন এবং সাহসী বামপন্থী ধারার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিজ দলের কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি বলেন, ‘আজ রাতে আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। আমি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে আপনাদের ডেমোক্রেটিক মনোনীত প্রার্থী হব।’
সাবেক গভর্নর কুওমোর মতো একসময়ের প্রভাবশালী ব্যক্তির বিপরীতে তার এই সাফল্যকে শহরের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ড্রামের রাজনৈতিক পরিচালক জাগপ্রীত সিং বলেন, ‘মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কারও মধ্যে জোহরানের মতো কাউকে দেখিনি, যিনি সামগ্রিকভাবে আমাদের চিন্তার বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটান।’