মক্কা অঞ্চলে ১২৫ কিমি জুড়ে বিশাল সোনার খনি আবিষ্কার
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৫ AM
সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা অঞ্চলে একটি বিশাল সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। ১২৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই সোনার খনি আবিষ্কারকে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অনুসন্ধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সৌদি সরকারের মালিকানাধীন খনিজ অনুসন্ধান সংস্থা মাআদেন (Maaden) জানিয়েছে, মানসুরা-মাসারাহ খনির দক্ষিণাংশে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উচ্চমাত্রার সোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষাগারে নেওয়া ড্রিল নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি টন মাটিতে সর্বোচ্চ ২০.৬ গ্রাম পর্যন্ত সোনা পাওয়া গেছে, যা আন্তর্জাতিক মানে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়।
মাআদেনের প্রধান নির্বাহী রবার্ট উইলে বলেন, ‘এই আবিষ্কার মক্কাকে বৈশ্বিক সোনার মানচিত্রে নতুনভাবে পরিচিত করবে। এটি সৌদি অর্থনীতির জন্য যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আবিষ্কার ভূগর্ভস্থ খনির সম্প্রসারণ, খনির কার্যক্রম দীর্ঘায়ন এবং একটি বিশ্বমানের ‘গোল্ড বেল্ট’ তৈরিতে সহায়ক হবে। তাদের মতে, এই অঞ্চলজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের সোনার পট্টি গড়ে উঠতে পারে, যা ভবিষ্যতে সৌদি আরবকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত করতে পারে।
বর্তমানে মানসুরা-মাসারাহ খনিতে আনুমানিক ৭০ লাখ আউন্স সোনার মজুত রয়েছে এবং প্রতিবছর প্রায় ২.৫ লাখ আউন্স সোনা উত্তোলন করা হয়।
এই নতুন আবিষ্কার সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ কৌশলের অংশ, যার লক্ষ্য হলো তেল নির্ভরতা হ্রাস করে খনিজ, প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তিকে জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই খনি থেকে হাজারো কর্মসংস্থান, বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক সোনার বাজারে সৌদি আরবের প্রভাব আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সৌদি শিল্প ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী বান্দার আলখোরায়েফ বলেন, ‘খনিজ খাত এখন আমাদের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সেক্টর। নতুন এই স্বর্ণখনি সৌদি অর্থনীতির বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টায় এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।’
সৌদি স্টক মার্কেট এবং মাআদেনের তথ্যমতে, মক্কার নিকটবর্তী ওয়াদি আল-জাও এবং জাবাল শাইবান এলাকাতেও নতুন সোনা ও তামার ভাণ্ডার পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলগুলোতেও বৃহৎ পরিসরে খনন কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই আবিষ্কার শুধু সৌদি আরবের জন্য নয়, বরং বিশ্ব সোনাবাজারেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ইতোমধ্যে প্রতি ১০ গ্রামে সোনার মূল্য ১১১৫.৮৪ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে নতুন এই খনি বৈশ্বিক সরবরাহ বাড়াতে এবং বাজার স্থিতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে (৮,১৩৩ টন), এরপর রয়েছে জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও রাশিয়া। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সৌদির নতুন এই স্বর্ণভাণ্ডার বৈশ্বিক বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক দামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংবাদসূত্র: ইন্টারন্যাশনাল দ্য নিউজ