নোবেলজয়ী দম্পতি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছেন, কারণ কী? 

এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়  © ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছেন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ দম্পতি নোবেলজয়ী এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ছেড়ে তারা সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবেন। আগামী বছর জুলাই থেকে জুরিখের অর্থনীতি অনুষদে তাঁদের কার্যক্রম শুরু হবে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফরাসি-মার্কিন নাগরিক এস্থার দুফলো এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, যখন মার্কিন প্রশাসন গবেষণা তহবিলে ব্যাপক কাটছাঁট করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার স্বাধীনতার ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে ‘ব্রেইন ড্রেন’ বা মেধা পাচারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে যৌথভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পান। ‘বিশ্বে দারিদ্র্য লাঘবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতির’ প্রয়োগের জন্য তাঁরা নোবেল পান। তাঁদের গবেষণা উন্নয়ন অর্থনীতির ক্ষেত্রে র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল পদ্ধতির ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করে। এই পদ্ধতি কঠোর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে কোন পদক্ষেপ কাজ করে এবং কোনটি করে না, তা যাচাই করতে সাহায্য করে।

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর, লেম্যান ফাউন্ডেশন-এর অর্থায়নে দুজনেই বিশেষ অধ্যাপক পদ লাভ করবেন। তাঁরা সেখানে একটি নতুন গবেষণা কেন্দ্র—‘লেম্যান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট, এডুকেশন অ্যান্ড পাবলিক পলিসি’ প্রতিষ্ঠা ও যৌথভাবে নেতৃত্ব দেবেন। লেম্যান ফাউন্ডেশন এই কর্মসূচিতে সহায়তা করার জন্য ২৬ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ অনুদান দিয়েছে।

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মাইকেল শ্যাপম্যান এই যোগদানকে ‘বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দুই অর্থনীতিবিদের আগমন’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন।

ড. ডুফলো জানান, এই নতুন কেন্দ্র তাঁদের কাজকে আরও সম্প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। লেম্যান সেন্টারের মূল লক্ষ্য থাকবে: গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে সরাসরি জননীতি প্রণয়নে কাজে লাগানো; উন্নয়ন অর্থনীতিতে আগ্রহী পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের মেন্টরশিপ দেওয়া; বিশ্বজুড়ে গবেষক এবং শিক্ষা নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করা, যাতে তাঁদের গবেষণা বাস্তবে নীতিগত প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে, দুফলো এমআইটিতে উন্নয়ন অর্থনীতি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ‘আব্দুল লতিফ জামিল অধ্যাপক’। তিনি কলেজ ডি ফ্রান্সের দারিদ্র্য ও জননীতি বিভাগের চেয়ারম্যান। এছাড়া, দুফলো প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিক্সের সভাপতি। তিনি ইকোনোমেট্রিক সোসাইটি, আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো।

 বাঙালি সন্তান অভিজিৎ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৮ সালে, হার্ভার্ড বিশ্ব
বিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি প্রিন্সটন এবং হার্ভার্ডে অধ্যাপক হন।

এরপর, তিনি এমআইটিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল প্রফেসর অব ইকোনমিক্স হন। ২০১৫ সালে বিয়ের পর, অভিজিৎ এবং দুফলো ‘আব্দুল লতিফ জামিল পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’ প্রতিষ্ঠায় সেন্দিল মুল্লাইনাথনের সঙ্গে যোগ দেন।

এছাড়া, অভিজিৎ ইকোনোমেট্রিক সোসাইটি, আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো।


সর্বশেষ সংবাদ