সুমুদ ফ্লোটিলা ঘিরে আগের পথেই হাঁটবে ইসরায়েল, নাকি ভিন্ন কোনো পন্থা?

গ্রেটা থুনবার্গ ও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা
গ্রেটা থুনবার্গ ও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা  © সংগৃহীত

গাজার বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ‌'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'। গাজাবাসীদের সহায়তার পাশাপাশি তাদের পক্ষে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে চলছে এই যাত্রা; যার নেতৃত্বে রয়েছে গ্রেটা থুনবার্গ। যদিও এই বহরকে ঘিরে প্রশ্ন একটাই- গত জুনে গাজার পথে চলা গ্রেটার জাহাজকে আটকে দেওয়ার মত কাজ এবারও কি করবে ইসরায়েল? নাকি ভিন্ন কোনো পন্থা? ইতোমধ্যেই বহরে থাকা দুটি জাহাজ ঘিরে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ইসরাইলী সেনাদের বিরুদ্ধে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর দিয়েছে।

এর আগে গত ৪ মাস আগে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টাকালে 'মেডলিন' নামের ত্রাণবাহী জাহাজটিকে আটকে দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। ওই বহরে সুইডিশ জলবায়ু অ্যাকটিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি সদস্য রিমা হাসান এবং আল জাজিরার ফরাসি সাংবাদিক ওমর ফায়াদ ছিলেন। বাকি সদস্যরা হলেন : ইয়াসেমিন আকার, ব্যাপ্টিস্ট আন্দ্রে, থিয়াগো আভিলা, পাস্কাল মরিয়েরাস, ইয়ানিস মুহাম্মদি, সুয়াইব ওর্দু, সেরজিও তোরিবিও, মার্ক ভ্যান রেনেস এবং রেভা ভিয়ার্ড।

বিবিসির তথ্য, গাজার প্রথম ও একমাত্র নারী মৎস্যজীবী মেডলিনের নামে ওই ইয়টের নামকরণ করা হয়। ইয়টটি পহেলা জুন ইতালি থেকে যাত্রা করে। পরে ৬ জুন ইতালির সিসিলি উপকূল থেকে গাজার উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী সেটিকে থামিয়ে দেয়।

পরে অবশ্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানায়, 'তারা কেবল প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মিডিয়া নাটক সাজাতে চেয়েছে – যেখানে এক ট্রাকেরও কম সহায়তা ছিল।' এ বিষয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন ওই সময় জানায়, জাহাজটি প্রতীকী পরিমাণে সহায়তা বহন করে, যার মধ্যে আছে চাল ও শিশুদের দুধের পাউডার।

সে সময় বহরের পক্ষে দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় বলা হয়, 'গাজায় যাওয়ার পথে সমুদ্রে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তার এবং ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অথবা তাদের সহযোগী, যারা ফিলিস্তিনি গণহত্যায় জড়িত, তারা তাদেরকে অপহরণ করেছে।' অন্যদিকে ইসরায়েল জানায়, মেডলিন গাজায় পৌঁছাতে চাইলে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। পরে অবশ্য তাদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়।

এবার কী হবে?
তথ্য বলছে, এবারের বহরে ৫০টিরও বেশি জাহাজ ও ৪০টিরও বেশি দেশের অংশ নিয়েছে। বহরটি ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেছে; যেখানে এর আগে আক্রমণ বা আটক হয়েছিল। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্লোটিলাকে বাধা না দিতে আহ্বান জানিয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণহত্যাসহ নানা ইস্যুতে ইতোমধ্যেই তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণকালে অনেক দেশের প্রতিনিধি ভাষণ বর্জন করার বিষয়টিও ভালোভাবে নেয়নি ইসরাইল সংশ্লিষ্টরা। স্বভাবতই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাই ইস্যুতে বড় ধরনের ঝুঁকি নেবে না তারা। সেক্ষেত্রে কিছু জাহাজকে ঢুকতে দিতে পারে ইসরায়েল। তবে এক্ষেত্রে সব জাহাজে থাকা ত্রাণ সামগ্রীর সবগুলো গাজায় পৌঁছাবে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ফ্লোটিলার সঙ্গে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তি জড়িত থাকায় বড় ধরনের রাজনৈতিক কিংবা বৈশ্বিক সংকট তৈরি হতে পারে- এমন কোনো কাজ করবে না ইসরায়েল। 

ঘটনা যাই হোক, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানানো এই বহর এখন গাজার একেবারে দ্বারপ্রান্তে। বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে— ইসরায়েল এবার কী করে? আবারও আটকে সংশ্লিষ্টদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, নাকি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভিন্ন কোনো পথ বেছে নেবে? যা-ই ঘটুক না কেন, এই ফ্লোটিলা ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনের ন্যায়বিচারের সংগ্রামে একটি ঐতিহাসিক প্রতীক হয়ে উঠেছে- সেই চাপও অনুভব করা শুরু করেছে ইসরায়েল।


সর্বশেষ সংবাদ