ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে ৫০ মিনিটের ফোনালাপ পুতিনের

ট্রাম্প ও পুতিন
ট্রাম্প ও পুতিন  © সংগৃহীত

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ভয়াবহ সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘ ৫০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার (১৪ জুন) অনুষ্ঠিত এই ফোনালাপে পুতিন ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানান এবং যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানান। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের| 

রুশ পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ফোনালাপে পুতিন ট্রাম্পকে জানান, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত অপ্রত্যাশিত ও ভয়াবহ মাত্রায় গড়াতে পারে—এ নিয়ে তিনি গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি সংঘাত ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেন।

পুতিন আরও জানান, তিনি ইতোমধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন। ফোনালাপে ট্রাম্প ও পুতিন পরমাণু আলোচনার টেবিলে আবারও ফিরতে পারে—এমন সম্ভাবনা খোলা রাখার বিষয়ে সম্মত হন বলে জানিয়েছেন উশাকভ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে লেখেন, “আমরা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তিনি (পুতিন) যেমন মনে করেন, আমিও মনে করি—এই যুদ্ধ থেমে যাওয়া উচিত। আমি তাকে বলেছি, তার যুদ্ধও বন্ধ হওয়া দরকার।”

ট্রাম্প বলেন, ফোনালাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুতিনের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো।

ফোনালাপটি এমন সময়ে হয়েছে, যখন ইসরায়েল ও ইরান দ্বিতীয় দিনের মতো একে অপরের ওপর ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক চেইন অব কমান্ডকে লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতেই এই হামলা করা হয়েছে।

প্রথমে হামলাকে “চমৎকার” বলে প্রশংসা করলেও ট্রাম্প ইসরায়েলকে এখনো হামলা বন্ধ করতে বলেননি। বরং যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্পও স্বীকার করেন যে পরিস্থিতি “অত্যন্ত উদ্বেগজনক”।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে রবিবার ওমানে হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা। তবে এই আলোচনা বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ওমানের কর্মকর্তারা। ট্রাম্প এর আগেই ইরানকে আলোচনায় ফিরতে ও “সব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে” একটি চুক্তি করতে আহ্বান জানান।

ফোনালাপে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসে—রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। উশাকভ জানান, পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, আগামী ২২ জুনের পর ইউক্রেনের সঙ্গে আবারও সরাসরি আলোচনা করতে রাশিয়া প্রস্তুত।

মে মাসে ট্রাম্পের উদ্যোগে তিন বছর পর প্রথমবার ইস্তানবুলে রাশিয়া-ইউক্রেনের সরাসরি বৈঠক হয়। সেই আলোচনার অংশ হিসেবে যুদ্ধাহত বন্দি বিনিময় ও নিহত সেনাদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুতিন।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার এমন মধ্যস্থতার প্রস্তাব একদিকে যেমন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা তৈরি করছে, অন্যদিকে আবার শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনাও তৈরি করছে। তবে পুতিন-ট্রাম্প সংলাপ কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা সময়ই বলে দেবে।


সর্বশেষ সংবাদ