‘পরিস্থিতি ভয়াবহ’— ইসরায়েলি অবরোধে ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে শিশুরা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৪:০২ PM , আপডেট: ২৮ মে ২০২৫, ০১:০৫ AM
একটি বিশৃঙ্খল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে এক শিশুর সন্ধানে ছুটছিলেন একজন। কয়েকদিন আগে মেয়েটির মা জানিয়েছিলেন—তারা ভালো নেই। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী খান ইউনিসের অধিকাংশ এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, আর সে সময় থেকেই তাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।
আল-মাওয়াইসি এলাকায় এখন বাস্তুচ্যুত মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। কোন দিকে যাওয়া নিরাপদ, সেটাও বোঝা মুশকিল। এমন অবস্থায় সিওয়ার ও তার পরিবার খুঁজে পায় একটি ছোট খুপরি ঘর, যেখানে সে আশ্রয় নিয়েছে তার মা নাজওয়া ও নানী রিমের সঙ্গে।
শিশু সিওয়ার জন্মেছে যুদ্ধের মধ্যেই। তার জন্ম হয়েছিল গত নভেম্বরে। সেই থেকে গোলার শব্দ, রকেট, বোমা—সবকিছুর মাঝেই তার বেড়ে ওঠা। মাথার ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ড্রোন, চারপাশে বিকট শব্দে গর্জে উঠছে যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক।
নাজওয়া বলেন, “এগুলো সে বুঝতে পারে। শব্দ শুনলেই সিওয়ার কান্না শুরু করে। ঘুম ভেঙে চমকে ওঠে, কাঁদতে কাঁদতে জেগে থাকে।”
শারীরিকভাবেও সিওয়ার দুর্বল। অ্যালার্জির কারণে সাধারণ দুধ সে হজম করতে পারে না। অথচ যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলা দুধের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।
মাত্র তেইশ বছর বয়সী নাজওয়া জানালেন, নাসের হাসপাতালে থাকাকালে সিওয়ার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। চিকিৎসকরা এক ক্যান গুড়ো দুধ দিয়েই তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেন। কিন্তু এখন সেই দুধ প্রায় শেষ। বাড়িতে আসার পর থেকে আবার সিওয়ারের ওজন কমতে শুরু করেছে।
“ডাক্তার বলেছেন সিওয়ার আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু আমার মনে হয় তেমন উন্নতি হয়নি,” বলছিলেন নাজওয়া। “যে এক ক্যান দুধ দিয়েছিল, সেটাও শেষ হতে চলেছে।”
দারিদ্র্য, খাদ্যসংকট, এবং মানবিক সহায়তার সীমাবদ্ধতার মাঝে শিশু সিওয়ারকে ঘিরে ধরছে আরও ভয়াবহ বাস্তবতা। মাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ তার মুখের চারপাশে ঘুরছে। নাজওয়া বলেন, “আমি স্কার্ফ দিয়ে ওর মুখ ঢেকে রাখি, যাতে কিছু ওকে স্পর্শ করতে না পারে।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকাই বর্তমানে হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে, নয়তো লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে খাদ্য, পানি, চিকিৎসা—সবকিছুর সঙ্কট ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টির কারণে বহু মা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না। এমনকি সিওয়ারের জন্মের সময়েই নাজওয়া নিজেও অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। খাবার সংগ্রহ, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা ডায়াপার কেনা—সবই হয়ে পড়েছে অসম্ভব।
নাজওয়ার মা বলেন, “দুধ ও ডায়াপার কেনার সামর্থ্য আমাদের ছিল না। সীমান্ত বন্ধ, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।”
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা কোগাট ২২ মে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই। তাদের বক্তব্য, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিশু খাদ্য ও ময়দা গাজায় পাঠানো হয়েছে। তারা এও অভিযোগ করছে, হামাস ত্রাণ সামগ্রী চুরি করছে।
তবে জাতিসংঘসহ ব্রিটেন ও অন্যান্য অনেক দেশ কোগাটের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজার ক্ষুধার্ত মানুষদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “ইসরায়েল যে পরিমাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যেন এক চা চামচ।” তিনি আরও বলেন, “তেল, আশ্রয়, রান্নার গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ফিলিস্তিনিরা এখন এক নিষ্ঠুর সংঘাতের নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে।”
তবু যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েল সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস ও সব জিম্মিদের মুক্ত করা হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধ চলবে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, অন্তত ২০ জন জিম্মি এখনো জীবিত অবস্থায় হামাসের হাতে রয়েছে, আর ৩০ জনের বেশি মারা গেছেন।
সূত্র: বিবিসি।