নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন
নির্বাচনী চাপের মুখে ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১০:৩৪ AM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ০৮:৩১ PM
শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনে গত বছরের আগস্টে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন উদযাপন করেছিল। কিন্তু ৯ মাসেও অন্তর্বর্তী সরকার সবাইকে হতাশ করেছে, যারা দেশে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিচ্ছেন যে যদি তাকে তার কাজ করতে দেওয়া না হয় এবং ধীরে ধীরে দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘পদত্যাগ ঘোষণা’র ইস্যু নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে ‘নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তজাতিকভাবে সম্মানিত মুহাম্মদ ইউনূসকে সুষ্ঠু নিবাচন না হওয়া পযন্ত সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাকে যখন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার নেতৃত্বে আনা হয়, তখনো রাস্তাঘাটে রক্তপাত চলছিল।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সহযোগীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ঐক্যের কারণে তিনি বাধাগ্রস্ত অনুভব করছেন। এই পক্ষ তার নীতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলছে যে তিনি নির্বাচন বিষয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছেন।
আরও পড়ুন : কখন কোন দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা
বৃহস্পতিবার (২২ মে) মুহাম্মদ ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগ করার হুমকি দেন।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড. ইউনূস তার পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণের খসড়া তৈরি করার জন্যও বলেছেন। অন্য উপদেষ্টারা তাকে বোঝান যে তার পদত্যাগে বাংলাদেশে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। ওই কর্মকর্তা ফোনে বলেন যে এ বছর নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অখুশি হয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর সমালোচনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছেন।
হাসিনা সরকারের বিরোধীরা যেকোনো নির্বাচনে জয় পাওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি জয়ী হবে তত বেশি লাভবান হবে। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার দল বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে কারণ সম্প্রতি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে দেশটিতে কার্যত অর্থবহ রাজনৈতিক কোনো প্রতিপক্ষ নেই।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটেছে, আর তা ঠিক করার উদ্যোগগুলোও চলছে অগোছালোভাবে। ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে দেশের সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়ের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেন। তার নিজের কোনো রাজনৈতিক সমর্থনও নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মোবাশ্বার হাসান বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস একজন চমৎকার ব্যাংকার হতে পারেন, প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দারুণ হতে পারেন; কিন্তু তার ঘাটতি রয়েছে। দিনের পর দিন স্পষ্ট হচ্ছে যে তার দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই। মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টাদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন বলেও মনে করেন মোবাশ্বার হাসান।
আরও পড়ুন : ড. ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন...
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যাদের তাকে সাহায্য করার কথা ছিল, তাদের কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করছেন বলে মনে করছেন অধ্যাপক ইউনূস। ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত’, গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা এর আগে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য দেশ প্রস্তুত হতে পারে। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তিনি তার মন্ত্রিসভাকে বলেছেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করেন না।
গত নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। তবে এই যাত্রাপথে আমাদের অনেক কাজ শেষ করতে হবে।’
বিএনপি জোর দিয়ে বলে আসছে যে দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণের আগে একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা ক্ষমতা লাভের সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।