গাজার অধিকাংশ এলাকায় অভিযান বিস্তারের হুঁশিয়ারি ইসরায়েলের

  © সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার প্রায় পুরো এলাকায় ইসরায়েল শিগগিরই আরও তীব্রভাবে সামরিক অভিযান চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। ইতোমধ্যে দক্ষিণ গাজার রাফা ও খান ইউনিস শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটি ‘নিরাপত্তা এলাকা’ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

শনিবার দেওয়া এক ঘোষণায় কাটজ জানান, ‘মোরাগ করিডর’ এখন আইডিএফের দখলে, যা রাফা ও খান ইউনিসের মাঝখানে অবস্থিত একটি পুরোনো ইহুদি বসতির নাম। তিনি বলেন, “আইডিএফ এখন মোরাগ করিডর দখল করেছে এবং এটি ফিলাডেলফি করিডর থেকে মোরাগ পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরায়েলি নিরাপত্তা এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”

এই করিডরের দখল মানে কার্যত গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা এখন খান ইউনিস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজার মোট ভূমির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ রাফার মধ্যে অবস্থিত।

এদিকে, গাজার কিছু অংশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে ইসরায়েল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেইসঙ্গে খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে হামাস।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ বলেন, “আইডিএফের অভিযান গাজার অধিকাংশ এলাকায় শিগগিরই আরও জোরালোভাবে বিস্তৃত হবে এবং সেসব এলাকার বাসিন্দাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে হবে।” তিনি এটিকে ‘হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করা ও যুদ্ধের সমাপ্তি টানার শেষ সুযোগ’ বলেও মন্তব্য করেন।

১৮ মার্চ শুরু হওয়া নতুন ধাপে ইসরায়েল আবারও হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে, যা আগের দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটায়। এর পর থেকেই গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করা হয়েছে এবং পুনরায় লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার চারপাশে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে বলে জানানো হয়, যাতে ভবিষ্যতের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। কর্মকর্তারা জানান, গাজায় হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে এই চাপ প্রয়োগের কৌশল নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত।

কাটজ আরও বলেন, গাজার উত্তরের বেইত হানুন ও কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত নেতজারিম করিডরসহ কিছু এলাকাও খালি করা হচ্ছে, যাতে সেখানে নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারিত করা যায়। “উত্তর গাজার বেইত হানুন ও অন্যান্য এলাকা খালি করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে,” বলেন তিনি।

এই অভিযান প্রসঙ্গে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষ’ নিহত হচ্ছে এবং জিম্মিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গত মাসে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয় এবং এতে ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাস, স্বাস্থ্য, খাদ্য বা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। তবে ইসরায়েল বলছে, সাধারণ মানুষ যাতে হামাসের মানবঢাল না হয়, তা নিশ্চিত করতেই তাদের সরে যেতে বলা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ছোড়া তিনটি গোলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। হামলার দায় স্বীকার করেছে হামাসের সামরিক শাখা।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ২১ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাস নির্মূল করতে সামরিক অভিযান শুরু করে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজার ৯৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া নতুন ধাপে প্রাণ গেছে এক হাজার ৫৬৩ জনের।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence