বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিল থেকে দ্বিগুণ সাহায্য চায় ভঙ্গুর দেশগুলো

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন  © ফাইল ছবি

আজারবাইজানের বাকুতে গত ১১ নভেম্বর থেকে চলছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৯)। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান পরিণতি মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলো কতটা সমর্থন পাবে, তা নিয়ে জাতিসংঘের এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনে আগের চেয়েও বেশি আলোচনা চলছে৷

সম্মেলনের চতুর্থ দিনে মূলত জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। বিশ্বে সংঘাত পীড়িত এবং জলবায়ুর পরিবর্তনে ক্ষতির মুখে থাকা এক ঝাঁক দেশ এবারের সম্মেলনে দ্বিগুণ আর্থিক সাহায্য দাবি করেছে।

দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং নিরাপত্তা সংকটের মুখে থাকা তাদের জনগণের জন্য বছরে ২ হাজার কোটিরও বেশি ডলার সাহায্য দেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। রয়টার্সের হাতে আসা একটি চিঠিতে দেখা গেছে এমনটিই।

আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকট মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনছে : ড. ইউনূস

সম্মেলনে যোগ দেওয়া দেশগুলো জলবায়ু তহবিল প্রশ্নে নতুন একটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার ব্যাপারে একমত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যেই নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা দেশগুলো চরম আবহাওয়া মোকাবেলায় আরও ভাল প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আরও তহবিল দাবি করছে।

এই নাজুক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ দেশ। তাদের যুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রস্তর বেড়ে যেতে থাকায় তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। অন্যদিকে, চিরহরিৎ বনাঞ্চল থাকা দেশগুলো কার্বন নির্গমন কম রাখতে তাদের এই বন রক্ষায় আরও বেশি অর্থ প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।

সংঘাত পীড়িত দেশগুলো বলছে, তারা বেসরকারি বিনিয়োগ পেতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, এ ধরনের বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে এসব দেশের গণমানুষের জন্য জাতিসংঘ তহবিলই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলোর মানুষেরা বেশিরভাগই যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে পড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

আরও পড়ুন: জলবিদ্যুৎ ভাগ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

অর্থায়নের বিষয়টি সমাধান করতে কপ-২৯ প্রেসিডেন্ট আজারবাইজান শুক্রবার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর একটি নতুন নেটওয়ার্ক চালু করবে, যার মধ্যে থাকবে সংঘাত পীড়িত গ্রুপ অব সেভেন প্লাস এর বেশি কিছু দেশও।

এই নেটওয়ার্ক জলবায়ু তহবিল প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একটি গ্রুপ হিসাবে অধিবক্তা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে, আরও বেশি অর্থ আকৃষ্ট করার জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সক্ষম করে গড়ে তুলবে এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে দেশগুলোতে প্লাটফর্ম সৃষ্টির কাজ করবে বলে জানিয়েছে থিংক ট্যাং ওডিআই গ্লোবাল।

বুরুন্ডি, চাদ, ইরাক, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, তিমুর-লেসটে এবং ইয়েমেন এরই মধ্যে এই উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। তবে গ্রুপ সেভেন প্লাস এর ২০ সদস্যদেশকে এ নেটওয়ার্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: তিন দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

বাকু সম্মেলনের ফাঁকে সোমালিয়ার প্রধান জলবায়ু আলোচক আবদুল্লাহি খালিফ বলেন, আমার আশা, এতে করে সহায়তার জন্য মরিয়া দেশগুলোর জন্য বাস্তবিকই একটি প্লাটফর্ম গড়ে উঠবে।

আরও সমর্ন ও সহায়তা চেয়ে গ্রুপ সেভেন প্লাস দেশগুলো গত মাসে জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং কপ প্রেসিডেন্সির কাছে একটি চিঠি পাঠানোর পর এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রয়টার্স এ চিঠিই হাতে পেয়েছে।

আরও পড়ুন: জলবায়ু সংকটের উদ্বেগ তুলে ধরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

চিঠিতে দেশগুলো কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে তহবিলের বিষয়ে যে কোনও চূড়ান্ত চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তাদের জন্য দ্বিগুণ আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি চেয়েছে। দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী, এ সহায়তা হতে হবে ২০২৬ সাল নাগাদ বছরে সামগ্রিকভাবে অন্তত ২ হাজার কোটি ডলার।

আজারবাইজান একটি তেল-রাষ্ট্র হওয়ার পরও এবারের জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করেছে তারা। দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভর করে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের ওপর। এমন এক দেশে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন গ্রেটা থুনবার্গসহ অন্যান্য জলবায়ু কর্মীরা।


সর্বশেষ সংবাদ