ঘোড়ায় চড়ে ‘ভিক্ষা’ করেন জালু মিয়া

হাঁটতে না পারায় ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করছেন জালু মিয়া
হাঁটতে না পারায় ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করছেন জালু মিয়া  © টিডিসি ফটো

বাংলায় একটি প্রবচন রয়েছে, ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ হাঁটিয়া চলি ‘- ঠিক তেমনটা না হলেও, ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ ভিক্ষা করিতে চলিল’ এ কথারই বাস্তব উদাহরণ হচ্ছেন ভোলার বোরহান-উদ্দিনের চরগঙ্গাপুর গ্রামের জালু মিয়া (৫৫)।

জালু মিয়া ভোলার সাচড়া ইউনিয়নের দরুন গ্রামের মৃত আঃ মতলেব’র ছেলে ৷ তারা ৪ ভাই ও ১ বোন; এক সময় তিনি তাদের গ্রামের পৌত্রিক বাড়ীতে থাকতেন ৷ তাদের নিজস্ব কোনো জায়গা জমি না থাকায় পরবর্তীতে একই ইউনিয়নের পাশের চর গঙ্গাপুর গ্রামে বোনের বাড়ীতে চলে আসেন তিনি ৷ বোনের বাড়িতে এসে থাকার জন্য অন্যের জমিতে পলিথিন আর নারিকেল পাতা দিয়ে তৈরি করেছেন ঝুপড়ি ঘর ৷ বৃষ্টি বর্তমানে সে ঘর দিয়ে পানি পড়লেও রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাকে থাকতে হয় সেখানেই।

জালু মিয়া জানিয়েছেন, তিনি তার ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রতিদিন ভিক্ষা করেন ৷ বয়সের ভারে হাঁটতে পারেন না বলে তাকে ঘোড়ায় চড়ে ভিক্ষা করতে হয়। ৪ বছর আগে ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকায় ঘোড়াটি কেনেন জালু মিয়া ৷ সে ঘোড়ায় চড়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। ভিক্ষা করে প্রতিদিন তার আয় হয় ৩শ থেকে ৪শ টাকার মতো। এতে ঘোড়ার খাবার কিনার পর কোন রকম চলছে তার মানবেতর সংসার জীবন ।

জালু মিয়া বলেন, আমি বিয়ে করার পর আমার একমাত্র ছেলেকে রেখে তার মা মারা যায়। এর কয়েকদিন পর সেই ছেলেটিও মারা যায় ৷ পরে দ্বিতীয় বিয়ে করি ৷ সেই ঘরে আমার কোনো সন্তান নেই ৷ ফলে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ভিক্ষা করে খুব কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে ৷ আমার কোনো জায়গা জমি নেই ৷ পরিবারেও সচ্ছল কেউ নেই; তাই পাশের গ্রামে এসে অন্যের জমিতে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকি ৷ বৃষ্টি আসলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে ৷ অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি ৷ ঘোড়াটাই আমার সম্বল । ঘোড়াটা আছে বলেই আমার ঘরে চুলা জ্বলে।

তিনি বলেন, আগে মানুষের কাজ করে খেতাম ৷ এই বয়সে এখন কেউ কাজ দেয় না ৷ তাছাড়া কাজ করার ক্ষমতাও আমার শরীরে নেই। কোন সহায় সম্বলও নেই ৷ তাই বাধ্য হয়েই এ পেশায় আসতে হয়েছে আমার। শেষ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে থাকার জন্য তাকে যেন একটি সরকারি ঘর প্রদান করা হয়—এমন দাবিও তার।

তার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তাদের কোন জায়গা জমি ও সন্তান নেই ৷ জালু মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় এখানে বসবাস করছেন ৷ ফলে, ভিক্ষা করেই তাদের খেতে হয়৷ তারা যে ঘরে বসবাস করেছেন তাতে কোন মানুষ মানবিকভাবে বসবাস করতে পারেননা বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার সাচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ মৃধা জানান, সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু পারি তাকে সহযোগিতা করি ৷ সে যাতে একটি সরকারি ঘর পায় তার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence