‘তাকে শেষ পর্যন্ত মরতেই হলো! আমাদের সমাজ বাঁচতে শেখায় না’

খাইরুন নাহার ও মামুন
খাইরুন নাহার ও মামুন  © ফাইল ছবি
‘তাকে শেষ পর্যন্ত মরতেই হলো! এক মাসও হয়নি খবরটি আলোচনায় এসছিল। ৪১ বছর বয়স্ক শিক্ষিকা বিয়ে করেছে এক কলেজ ছাত্রকে। যার বয়েস ২৩ বছর। একটা ভিডিও ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল- যেখানে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রেম-বিয়ে এইসব নিয়ে কথা বলছে। তারা আজীবন এক সাথে থাকতে চায় ইত্যাদি। ওই ভিডিও দেখেই আমার মনে শঙ্কা কাজ করছিল। কেন শঙ্কা হচ্ছিল জানেন?
 
আমি সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক। অনেক দিন ধরে আমি লিখে চলেছি- আমাদের সমাজ বাঁচতে শেখায় না। এই সমাজ মরতে শেখায়। আপনি যদি সাধারণের চাইতে একটু ভিন্ন হন; তাহলে জেনে নিন- বাংলাদেশ আপনার জন্য না।
বিয়ে না হলে বলবে- বিয়ে হচ্ছে না কেন? বিয়ে করলে বলবে- এমন ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে করলে কেন? বিয়ে করে সুখে আছেন? তখন বলবে- ছেলে-মেয়ে হচ্ছে না কেন? ধরেন মেয়ে হয়েছে। এরপর বলবে- ছেলে হচ্ছে না কেন? এইবার ছেলে-মেয়ে দুটোই হয়েছে। এখন বলবে- সন্তানদের ভালো একটা স্কুলে দিচ্ছেন না কেন?
 
একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকেই এই সমাজে প্রতিনিয়ত এইসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সমাজ আপনাকে বলে দেয়- তুমি এটা করছ না কেন? ওটা করছ না কেন? একবার চিন্তা করে দেখুন- আপনি যদি অন্যদের চাইতে একটু ভিন্ন হন; তাহলে এই সমাজ আপনার জন্য রীতিমত নরক। সমাজ আপনাকে বার বার মনে করিয়ে দেবে- তুমি বেঁচে আছো কেন? তুমি মরে যাচ্ছ না কেন? এটাই আমাদের সমাজ।
 
আমি জানি না- এই শিক্ষিকা কী আত্মহত্যা করেছেন নাকি এর পেছনে অন্য কোন গল্প আছে। তবে আমি এটা জানি- মেয়েটাকে মরতে হয়েছে। সে আর বেঁচে নেই। এই পৃথিবীতে তার জায়গা হয়নি। আবারও বলি- আমাদের সমাজ বাঁচতে শেখায় না। মরতে শেখায়। আমরা ভুলতে বসেছি- মানুষের জন্য সমাজ। সমাজের জন্য মানুষ নয়। যে সমাজ মরতে শেখায়; সে সমাজ মানুষের না। সে সমাজ রাক্ষসের। সে সমাজ দানবের।’
 
লেখক: আমিনুল ইসলাম
সিনিয়র লেকচারার ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগ, এস্তনিয়ান এন্টারপ্রেনারশিপ ইউনিভার্সিটি।

সর্বশেষ সংবাদ