শ্রীলঙ্কার পর বাংলাদেশসহ এশিয়ার যেসব দেশের জন্য সতর্ক সংকেত

গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ
গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কিছু দেশের জন্য শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি সতর্ক সংকেত। অনলাইন বিবিসিতে সুরঞ্জনা তিওয়ারি এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। শ্রীলঙ্কার মতো এশিয়ার আরও অনেক দেশই ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, যেসব দেশের ঋণের পরিমাণ বেশি ও সীমিত নীতি রয়েছে তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতে পারে। 

শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকট এসব দেশের জন্য সতর্কবার্তা। শনিবার তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো পরপর চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে দেশটির দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

তাছাড়া এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ। চলতি বছরে শ্রীলঙ্কার রুপির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। দেশটির এই পরিণতির জন্য অনেকেই গোটাবাইয়া রাজাপাকসেকে দায়ী করে থাকেন। তাদের দাবি, সাবেক প্রেসিডেন্টের ভুল নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতির আজ এই অবস্থা। বর্তমানে ৩ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য আইএমএফের সঙ্গে দর কষাকষি করছে শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা। যদিও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আপাতত আলোচনা বন্ধ রয়েছে। 

তবে রাজনৈতিক কারণে শ্রীলঙ্কা এই সংকটে পড়েছে তা নয়। বিশ্বজুড়েই পণ্যের দাম বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এক পর্যায়ে তা দ্বিগুণও হয়েছিল। ফলে দেশগুলোর ফরেন কারেন্সির যে রিজার্ভ ছিল তা দ্রুত ফাঁকা হয়ে আসছে। যেসব দেশের রিজার্ভ ভালো ছিল তারা নানাভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা রিজার্ভ শূন্য হয়ে পড়ায় এই ভয়াবহ সংকটে পতিত হয়েছে। এ ছাড়া আরও যেসব দেশ একই ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে-

লাওস
পূর্ব এশিয়ার লাওস ৭৫ লাখ মানুষের দেশ। এটি সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন। আগে থেকেই বেশ ধুঁকছিল দেশটির অর্থনীতি। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি করুণ হয়েছে। পাশাপাশি খাদ্যের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। সেখানকার এক তৃতীয়াংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, তেলের সংকটের কারণে সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তেল কিনতে হচ্ছে। 
এদিকে কমে যাচ্ছে লাওসের মুদ্রা কিপের দামও। এ বছর মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক তৃতীয়াংশ দাম হারিয়েছে কিপ। আগে থেকেই ব্যাপক ঋণে জর্জরিত ছিল লাওস। এই সংকটের মধ্যে সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লাওসের মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ছিল। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দেশটি চীন থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিল। সেগুলোই এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাওসের জন্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প ও রেলওয়ের জন্য এই ঋণ দেয়া হয়েছে। গত বছরই লাওসে ১৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের ৮১৩টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে চীন। 

পাকিস্তান
গত এক দশক ধরেই অর্থনীতি ধুঁকছে পাকিস্তানের। তবে এবার একদম খাদের কিনারায় চলে এসেছে দেশটি। গত মে মাসের তুলনায় জ্বালানির দাম ৯০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে। সংকট সামাল দিতে আইএমএফের কাছে সাহায্য চেয়েছে দেশটি। কিন্তু দেশটির অবস্থা এরইমধ্যে এতটাই খারাপ হয়েছে যে তা আদৌ সামাল দেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জুন মাসেই ২১.৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি দেখেছে দেশটি। গত ১৩ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। শ্রীলঙ্কা এবং লাওসের মতো পাকিস্তানও ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। গত বছরের আগস্টের তুলনায় দেশটির রিজার্ভ অর্ধেকে পরিণত হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে বড় শিল্পগুলোকে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিতে বলেছে পাক সরকার। এতে ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

মালদ্বীপ
প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার মতো মালদ্বীপের অবস্থাও সংকটাপন্ন। মহামারির কারণে পর্যটননির্ভর দেশটির অর্থনীতি একেবারে থেমে ছিল। বিশ্বব্যাংক বলছে, মালদ্বীপের অর্থনীতিতে কোনো বৈচিত্র্য না থাকায় তারা বড় ঝুঁকিতে পড়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং পর্যটন কমে যাওয়া দুটিই মালদ্বীপের এই অবস্থার জন্য দায়ী। 

বাংলাদেশ
গত মে মাসে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়ায় ৭.৪২ শতাংশে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরমধ্যে দেশের রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে আছে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে লাগাম টানা এবং কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সীমিত করা। তারপরেও সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের বিশ্লেষক কিম এং টান বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নতুন করে ঠিক করছে এবং ভোক্তা কার্যক্রমের উপরে বাধানিষেধ আরোপ করেছে। 

মহামারিতে ক্ষত-বিক্ষত অর্থনীতির দেশগুলোকে এখন নতুন করে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ধনী দেশগুলো সামাল দিতে পারলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো এই সংকটে হিমশিম খেতে শুরু করেছে। নিজেদের দুর্বল অবকাঠামোকে শক্তিশালী করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা যে ঋণ নিয়েছে তা এখন বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বৈশ্বিক এই শকওয়েভে সব থেকে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে এই দেশগুলোই।

সূত্র: বিবিসি


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence