উচ্চ শিক্ষা কি পথ হারাবে?

সালাউদ্দিন সোহাগ
সালাউদ্দিন সোহাগ  © সংগৃহীত

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলায় বা বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার গোড়াপত্তন। ১২ টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় এদেশের উচ্চ শিক্ষা। এরপর একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৩), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৬) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭০)। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ধারা শুরু হয়। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে ইতোমধ্যে ১৬৫ তে উন্নীত হয়েছে। যার মধ্যে ৫৮টি পাবলিক ও ১০৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩০। অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। জেলায় জেলায় নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। আমি বিষয়টিকে দেশের উচ্চ শিক্ষার সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবেই দেখি। তবে গুণগত শিক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে গেলে এ উদ্যোগ কোন ফল দিবে না। বরং উচ্চ শিক্ষা খাতকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার ইতিহাস ১০০ বছরের। বৃটিশ আমলে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান অধ্যায়ের সমাপ্তি শেষে এখন বাংলাদেশ। যদি এটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, তবে দাঁড়ায়- বাংলাদেশ পূর্ব অধ্যায় (১৯২১- ১৯৭০) এবং বাংলাদেশ অধ্যায় (১৯৭১-২০২২)। উচ্চ শিক্ষার অবদান নিয়ে সাধারণ সরলীকরণ করলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে তৎকালীন উচ্চশিক্ষার অবদান ছিল অন্যতম। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আসবে। একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অবদানকে যদি ১৯২১-৭০ সালের উচ্চ শিক্ষার অর্জন হিসেবে ধরে নেই, তাহলে ১৯৭১-২০২২ সালের ৫০ বছরের উচ্চ শিক্ষা আমাদের কি দিল? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উন্নয়নের পিছনে বর্তমান চলমান উচ্চ শিক্ষার অবদান কোথায়?

আরও পড়ুন- উচ্চ শিক্ষায় কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংবাদিকতা করার সুবাদে এই সময়ে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত প্রায় সব ধরণের রাজনৈতিক, একাডেমিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী কিংবা দলীয় পরিচয় বহনকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সব সময়ই মনে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে গুটি কয়েক শিক্ষক ও ছাত্র কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের আওয়াজ জোরালো হয়নি। যেমনি হয়না, মাইকের সামনে খালি গলার আওয়াজ।

যখনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চালকের ভূমিকায় থাকা শিক্ষক নেতা কিংবা ছাত্র নেতার সাথে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তারা সব সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম দিয়ে বিবেচনা করেছেন। তাদের হিসাব দেশের স্বাধীনতা ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে থেমেছে। কিন্তু জ্ঞান- বিজ্ঞানে আমরা কোথায় আবদান রেখেছি তা নিয়ে কোন যুক্তি তারা দেখাতে পারেননি। অবশ্য আমাদের একজন ভিসি কম দামে চা-সিংগারা খাওয়ানোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান হিসেবে বড় করে দেখেছেন। তবে যারা লাইব্রেরি কিংবা শ্রেণিকক্ষের সামনে মাইক লাগিয়ে সভা-সমাবেশ করাকে প্রাধান্য দেয়, তাদের চিন্তার দৌরাত্ম্য যে রাজনীতির বিন্দুতেই সীমাবদ্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য উচ্চ শিক্ষা উন্মুক্ত করেছেন: নওফেল

দেশের উচ্চ শিক্ষার অগ্রযাত্রা রাজনীতির দাবার চালে আটকে গেছে। লেজুড়বৃত্তি শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি দিয়ে ক্যাম্পাস দখলে রাখা হয়েছে। কেননা রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন, "ক্যাম্পাস দখল মানেই দেশ দখল। ক্যাম্পাস যার, দেশ তার"। কিন্তু তারা ভুলে যান, দেশ ভালো ভাবে চালাতে হলে মেধাবী জনশক্তি প্রয়োজন। যা কেবল ভালো মানের উচ্চ শিক্ষা থেকেই পাওয়া সম্ভব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ কি তাদের চোখে পড়ে না? তারাও তো দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান। তাদের সন্তানরাও তো বিদেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়েছে। সেই ক্যাম্পাসগুলোতে কি তারা লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষক কিংবা ছাত্র রাজনীতি দেখেছেন? অবশ্যই দেখেন নাই। তবে কেন আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা চালু রেখেছেন? কেন শিক্ষক-শিক্ষকে বিবেদের দেয়াল তুলে দিচ্ছেন। কেন তাদের নীল-সাদা-গোলাপীতে রং মাখাচ্ছেন? কেনই বা এক বন্ধুর পিছনে অন্য বন্ধুকে লেলিয়ে দিয়েছেন? সবই কি ক্ষমতার জন্য?

৫০ বছর তো হলো। এবার থামুন। যে উন্নয়নের বয়ান শোনানো হচ্ছে তা হয়তো ইট পাথরের উন্নয়ন। কিন্তু শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া ওই উন্নয়নের কোন মূল্য থাকবেনা। কেননা শিক্ষার উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই আগামীর বাংলাদেশ দাঁড়াবে। সে দিকে নজর দিন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে দলীয় ক্যাম্পে পরিণত না করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রে পরিণত করুন। আসলেই উচ্চ শিক্ষার মেরামতটা জরুরি। কিন্তু এগিয়ে আসবে কে?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence