বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরোপিত ভ্যাট, ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

সালটা ২০১৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নবাজ তরুণ আমরা। জুন মাস, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা চলছে। তখন নো ভ্যাট ম্যুভমেন্ট করেছিলাম আমরা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত স্যার ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করতে চেয়েছিলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেবার পুলিশ আফতাবনগরে রাবার বুলেট ছোড়ে। প্রেস ক্লাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লাঠিচার্জও করে। পরে আন্দোলনের মুখে ভ্যাট বাতিল করে।

২০১৮ সালে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্যে আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করে বাজেটে। কিন্তু সেদিনই প্রতিবাদ করায় বাজেট পরবর্তী অধিবেশনে ভ্যাট প্রত্যাহার করে।

ঠিক ৩ বছর পর এবার ২০২১-২২ অর্থবছরে আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ওপর ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর ইতিহাস অনেকেই জানেন; আবার যারা এখন বিশ্ববিদ্যালগুলোতে পড়ছেন, তাদের অনেকে এই ইতিহাস জানেন না। কোন প্রেক্ষাপটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে?

শিক্ষা বাংলাদেশের নাগরিকমাত্র মৌলিক অধিকার। কিন্তু সরকারি, পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে আসনসংখ্যা অপ্রতুল। এই অপ্রতুলতাকে সম্ভাবনায় পরিবর্তন করার জন্যে কিছু শিক্ষাবিদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইডিয়া (পরামর্শ) শেয়ার করে।

নিলয় শাহ্‌রিয়ার

স্বভাবতই কিছু ব্যবসায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে এগিয়ে আসে। যে সকল সামর্থ্যবান অভিভাবক তাদের সন্তানের উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্যে সম্পূর্ণ খরচ নিজেরা বহন করে সরকার তথা রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে চান, তারা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়াতে পারেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কিছু বিধিনিষেধ তৈরির দায়িত্ব নেন। সেসময় বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে পর্যায়ক্রমে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারীকরন অথবা পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সুযোগ সুবিধা ও সাবসিডি প্রদান করা হবে।

কিন্তু হায়! ২৫ বছর পরেও আজ সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুযোগ-সুবিধা ও সাবসিডি তো দূরের কথা পরপর ৩ বার ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা করছে সরকার।

কর্তৃপক্ষ যদিও শিক্ষার্থীদের ওপর এই ভ্যাট আরোপ করছেন না; কিন্তু এটা সকলেই বোঝেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভ্যাট প্রদানের অজুহাতে পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের থেকেই এই টাকা তুলে নেবেন। কিন্তু এই বৈশ্বিক মহামারিতে নতুন করে অনেকেই দারিদ্রতায় ভুগছেন। তারা সন্তানের পড়াশোনার খরচ যোগাতে গলদঘর্ম, ভ্যাটের টাকা যোগাবেন কীভাবে?

আমরা এখনো সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারি নাই। পাঠ প্রদান পদ্ধতি নিয়ে খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সন্তোষজনক, সার্বজনীন এবং আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নাই।

সরকার ব্যবসায়ীদের করোনার প্রভাবের কারণে প্রনোদনা প্রদান করলেও দেশের কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এই সুবিধা পাচ্ছে না। ভ্যাট আরোপ করতে হয়, অন্যান্য খাতে করেন।

কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থসেবা খাতকে ভ্যাট মুক্ত রাখেন। আর যাই হোক, সংবিধান রাষ্ট্রের জন্যে সরকারকে সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবার নির্দেশ প্রদান করেছে।

এমতাবস্থায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আসা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বিদ্যমান কোভিড মহামারিতে রাজপথে নামাটা শিক্ষার্থী এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থের জন্যে হুমকিস্বরুপ।

এরপরও যদি মাননীয় অর্থমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট আরোপ করতে চান, তবে জনস্বার্থে রিট পিটিশন ছাড়া অন্য কোন উপায়ান্ত আমার জানা নেই।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ