মেধাবীরা চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে, কিন্তু কারো উদ্বেগ দেখছি না!

করোনার কারণে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা
করোনার কারণে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর সরকারি ঘোষণায় ১৭ মার্চ থেকে কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে পিএসসি, জেএসসি, এইচএসসি এবং সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। তবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনলাইনে পাঠদান চলছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। স্কুল কলেজে অভ্যন্তরীণ কিছু পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু বলা যাচ্ছে না যে শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকঠাক চলছে। সার্বিক বিষয় আলোচনা না করে এখানে আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে ঠিকই, কিন্তু তেমন ফলপ্রদ হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে, অনলাইন ক্লাসে একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্যও স্বস্তিদায়ক নয়। তাছাড়া নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা এবং উন্নত ডিভাইস (কম্পিউটার, ট্যাব, এন্ড্রয়েড ফোন ইত্যাদি) সবার কাছে থাকে না।

মনে রাখা দরকার, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ ছেলে-মেয়ে গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। এছাড়া ক্লাসে প্রত্যক্ষ পঠন-পাঠনে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকের মধ্যে যে মনোরম ও দ্বিমুখী যোগাযোগ হয় সেটা অনলাইন ক্লাসে সম্ভব নয়। আবার ব্যবহারিক শিক্ষা নির্ভর বিষয়ে অনলাইন পাঠদান তেমন কার্যকর নয়। তাই প্রত্যক্ষ পাঠদানের কোন বিকল্প নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে ইউজিসির সন্তোষজনক আলোচনার পেক্ষিতে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা (কুবি) স্বাস্থ্যবিধি মেনে কয়েকটি বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার শিডিউল ঘোষণা করি। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস বন্ধ থাকার পর ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার সিডিউল পেয়ে মনে হলো ওরা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা যথাসময়ে পরীক্ষায় বসলো, কিছু পরীক্ষা শেষ হলো কিছু শেষ হলো না।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর শেষে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসলো ২৩ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আকস্মিক এ সরকারি ঘোষণায় ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্ছ্বাস ফিকে হয়ে গেল। তারা আবার হতাশায় নিমজ্জিত হলো। অনিশ্চিত শিক্ষাজীবন! এখানে মনে রাখা দরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা শুরুতেই প্রায় ১০ মাস থেকে ১২ মাস সেশনজট নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধ সেশনজটের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়!

করোনার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও প্রাইভেট বিশ্বিবদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুধু পুরোদমেই চালিয়ে যাচ্ছে না, নতুন নতুন সেশনে ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা তুলনামূলকভাবে মেধাবী। এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কারো মধ্যে তেমন কোন উদ্বেগ দেখছি না!

সত্য কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এখন হতাশাগ্রস্ত! এ ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকানো যায় না! প্রকৃতপক্ষে হতাশা থেকে আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে চাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের মতো শিক্ষকগণও ক্লাসে ফিরতে চায়, পরীক্ষা নিতে চায়। কলকাকলীতে মুখরিত ক্যাম্পাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রকৃত ঠিকানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক মনে করে শিক্ষার্থীরা তাদের হৃদস্পন্দন। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষর্থীদেরকে সেকশন করে শিফট ভিত্তিক ক্লাস করাবো, বড় পরিসরে বড় হলরুমে এক বেঞ্চে একজন করে বসিয়ে পরীক্ষা নেব। এখন প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত।

ইতোমধ্যে নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ মাস বন্ধ, শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষকদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের মাথা ব্যাথা থাকবে কেন? তারা তো নিয়মিত বেতন ভাতা পাচ্ছে। আসলে এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, সরকারি সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ এখনই ক্লাসে ফিরতে আগ্রহী। কিন্তু মনে রাখতে হবে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে শিক্ষকদের কিছুই করার নেই।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার বেশি হবে’- এ যুক্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। আমরা দেখছি দূরপাল্লার গাড়ি ব্যতীত জেলার অভ্যন্তরে সকল প্রকার গাড়ি-ঘোড়া চলছে। গার্মেন্টসসহ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা। অফিস চলছে, দোকানপাট, প্রার্থনালয় সবই উন্মুক্ত। এখানে যদি করোনার বিস্তার না ঘটে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে করোনার বিস্তার ঘটবে, এমন চিন্তা অমূলক নয় কি? মনে প্রশ্ন জাগে, করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংসের কোন ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছিনাতো?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা সহজে যাবে না, তাই করোনার মধ্যে থেকেই আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পরিশেষে, সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রাখছি, আর দেরি না করে এখনই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ঘোষণা দিন।

লেখক: অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence