বিসিএস ক্যাডারদের সংবর্ধনা দেয়া বুয়েট ভিসির জন্য লজ্জাজনক

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি ফটো

বিসিএস ক্যাডার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া সংবর্ধনার সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক লিখেছেন, বুয়েটের ভিসি সংবর্ধনা দেবেন যদি যদি তার ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখে। বুয়েটে ভর্তি হয় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য। তাদের পেছনে সরকার মানুষের ট্যাক্সের টাকা থেকে বিপুল অংক খরচ করা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য। একটি দেশের উন্নতির জন্য মানসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই ইঞ্জিনিয়াররা যদি দলে দলে সাধারণ প্রশাসন ক্যাডারে যায় সেটা খুবই উদ্বেগজনক। ব্যতিক্রম সব কিছুতেই থাকবে। কিছু ইঞ্জিনিয়ার যাবে এবং যাওয়াটা দোষের কিছু না। কিন্তু সেই সংখ্যাটা যদি খুব বড় এবং বড় এই সংখ্যায় যাচ্ছে দেখে সেই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ব্যক্তি যদি গর্ববোধ করেন সেইটা এলার্মিং। দলে দলে যাওয়াটা মানে হলো বুয়েট হলো বুয়েট তার সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না। এটা বরং ভিসির জন্য লজ্জাজনক। আর উল্টা কি দেখছি? তিনি তাদের সংবর্ধনা দিচ্ছেন।

ড. কামরুল হাসান লিখেছেন, উক্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চে আরো ছিলেন বুয়েটের প্রো-ভিসি আর ১০ জন সরকারি কর্মকর্তা। তবে এটি কি আদৌ সত্যি কিনা এই নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ এইরকম কোন অনুষ্ঠান বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানের ভিসি আয়োজন করবেন কিংবা অন্য কেউ আয়োজন করলে সভাপতিত্ব করবেন এটি কল্পনাও করা যায় না।

একই কথা প্রযোজ্য ডাক্তারদের ক্ষেত্রে। থাঙ্কস গড যে মেডিকেল কলেজের প্রাধাক্ষ্য এখনো এইরকম সংবর্ধনার আয়োজন করেননি। তবে বুয়েটের ভিসির উদাহরণ সৃষ্টির পর আগামীতে সম্ভবত এটাও আমরা দেখব। বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরাও যায়। সেজন্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও একই কাজ করবেন। এই বিসিএসকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে যে জন্ম হওয়ার পর থেকেই বাবা মা শিক্ষক শিক্ষিকা সবাই চাইবে দেশের সকল ছেলেমেয়েরা বিসিএস ক্যাডার হউক।

দেশ উন্নতি করে দেশে যত বেশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষক হবে। ইসরালের এত কম জনসংখ্যা নিয়েও পৃথিবীতে এত ক্ষমতাধর কিভাবে? কারণ তাদের দেশে প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যার ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ গবেষক। ভারতের সেই জায়গায় ২৫৮! বাংলাদেশের কত? একই কথা বলা চলে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও অন্যান্য টেকনিক্যাল ডিগ্রীর ক্ষেত্রে। প্রতি মিলিয়ানে কতজন ইঞ্জিনিয়ার, কতজন ডাক্তার ইত্যাদিও উন্নতির ইনডেক্স।

এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ৩৮তম বিসিএসসে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বুয়েট অডিটোরিয়ামে বুয়েটিয়ান অল ক্যাডারস্ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান। ‍

বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান। অনুষ্ঠানে ৩৮তম বিসিএসসে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিসিএসের অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হিসেবে প্রথমে বুয়েটে ক্যাম্পাসে আসি। এর চার বছর তিন মাস পর ১৯৮১ সালের ৩০ মার্চ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা  ‍শুরু করি। আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে  ধরনের কোন অনুষ্ঠান দেখিনি। এটাই প্রথম। আমাদের কৃতি সন্তানরা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করছেন, সেটি অত্যন্ত আনন্দের।


সর্বশেষ সংবাদ