শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কবে বাস্তবায়ন করবে রাবি প্রশাসন?

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সত্যতা পেয়ে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দূরীকরণসহ শিক্ষা ও গবেষণার মান সুরক্ষার স্বার্থে কিছু নির্দেশনা দেন ও কিছু বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করেন। গত ১০ ডিসেম্বর তারিখে দেয়া এসবের উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিতকরণ।

২) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের নিয়োগ নীতিমালা বাতিল করে ১৯৭৩ এর আদেশ অনুযায়ী পরিচালিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন।

৩) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক নিয়ম বহির্ভুতভাবে দখলে রাখা ডুপ্লেক্স বাড়ির ভাড়া ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদানপূর্বক চালানের কপি জরুরী ভিত্তিতে  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রেরণ।

৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার  প্রফেসর এম এ বারীকে অসদাচরণের জন্য রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর্যুক্ত নির্দেশনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন উপাচার্যের অবশ্যই করণীয়। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া দুটি বাসের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, “না না, চিঠি আসলোই তো কালকে। এছাড়া রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি বিষয়টি আইনি ব্যাপার।” এ বক্তব্য বিভিন্ন অনলাইন/প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। অধিকিন্তু, আমার জানা মতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭ সালের নিয়োগ নীতিমালা বাতিল করে ১৯৭৩ এর আদেশ অনুযায়ী পরিচালিত অন্যান্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অদ্যাবধি কোন সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়নি।

এছাড়া ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব নিলীমা আফরোজ স্বাক্ষরিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নীতিমালা ২০১৫ শিথিল  করে পরিবর্তিত নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়ে জনাব সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং জামাতা জনাব এ টি এম শাহেদ পারেভেজকে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

উপাচার্যের এরূপ স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং গবেষণার মানও নিম্নগামী করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না- ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব নিলীমা আফরোজ স্বাক্ষরিত পত্রে ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে উপাচার্যকে  অনুরোধ করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নীতিমালা-২০১৫ শিথিল করে পরিবর্তিত নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ ওঠায় তার তদন্ত করে ইউজিসি। তদন্ত দল এর সত্যতা পাওয়ায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হওয়ার অভিযোগ তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ সাত শিক্ষকের কাছে এর কৈফিয়ত তলব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের প্রত্যেকের নামে পৃথকভাবে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে চিঠি প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৈফিয়তের মুখে পড়া বাকি বাকি ছয় শিক্ষক হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মুজিবুর রহমান, আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজী তৈহিদুর রহমান, আইন বিভাগের  শিক্ষক শিবলী ইসলাম এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন টুটুল।   

এদের মধ্যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন টুটুল ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গাজী তৈহিদুর রহমান যথাক্রমে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ও  উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো.জাকারিয়ার ভাগনে। শিবলি ইসলাম হচ্ছেন সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস’র বোনের ছেলে। অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বর্তমান প্রশাসন দায়িত্বগ্রহণের পর প্রথম দিকে ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এম মুজিবুর রহমান আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সদস্য। এছাড়া জামায়াতপন্থী শিক্ষক আব্দুল হান্নান আইন বিভাগের সভাপতি। 

লেখক; প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ