কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়?
- ফারজানা ইসলাম সাদিয়া
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০২:১৭ PM , আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০২:১৭ PM
দেশের করোনার ১ম ঢেউ শেষ না হতেই ২য় ঢেউ নাকি এসে গেছে বা আসবে তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ভবিষ্যতে কি ৩য়, ৪র্থ ঢেউ আসবে না? ১ম ধাপে দেশের সকল সেক্টরের ওপরে প্রভাব পড়লেও ২য় ধাপে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের ওপরে বেশী প্রভাব পড়ছে।
আমরা বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে যে চিন্তা করছি সেই হিসাবে এই শীতের পরে তথা আগামী মার্চের পরে করোনার প্রকোপ কমে যাবে বলে আশা করছি, এখন প্রশ্ন হলো যদি কমেও যায় তার পরেও অবস্থা গত মার্চের চেয়ে কি ভালো হবে, যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল? আর উত্তর প্রায় আমাদের সকলেরই জানা। তাহলে আগামী মার্চেও যদি এখনকার মতো অবস্থা থাকে তখন কি করা হবে? আগামী বছরও কি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে?
আর ভ্যাক্সিন এর বিষয়ে বলতে গেলে এখনো কোনটারই ফাইনাল প্রোডাকশন শুরু হয় নাই, আর আমাদের সাথে যাদের চুক্তি হয়েছে সেটারও কোন আপডেট নেই। তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দেশে ভ্যাক্সিনেশন এর জন্য অন্তত ২ বছর লাগবেই।
তাহলে এই দীর্ঘ সময় কি শুধু টিভি, বেতার আর অনলাইনে ক্লাস চলবে আর অফ লাইনে অটো পাস বা এসাইনমেন্ট দিয়ে পাস এই নিয়মে চলতে থাকবে? সেটাও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত,যেখানে এই ৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও শিক্ষার্থীদের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় নাই,কারণ এতে তাদের শিক্ষা বর্ষে এর কোন প্রভাব পড়ে নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, মাত্র ১ বা ২ টি
পরীক্ষার জন্য গ্রাজুয়েশন শেষ হচ্ছে না অনেক শিক্ষার্থীর। বাদ পরে যাচ্ছে অনেক চাকুরির পরীক্ষা, দীর্ঘ হচ্ছে বেকারত্বের অভিশাপ।
বর্তমানের সকল খবরে দেখা যায় ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ নিয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে যেখানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় এই ৪টি পর্যায়কে একই সাথে ধরা হচ্ছে। আসলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে ৪ স্তরের বিনস্ত সেটা ভেবে কাজ করতে হবে, সব সময় সকল নির্দেশনা শুধু ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ না বলে চারটি স্তরের জন্য সিদ্ধান্ত চার রকমের হওয়া উচিত।
কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ বছরের শিশু শিক্ষার্থী আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ২৫ বছরের শিক্ষার্থীদের জন্য কি একই নিয়ম বর্তমান সময়ে প্রযোজ্য, আর তাদের কাছে এই দীর্ঘ ৮ মাসের মূল্য কি একই? সকলের চিন্তা কিভাবে এইচএসসি এস এস সি হবে,পরবর্তী শ্রেণিতে কিভাবে শিক্ষার্থী উর্ত্তীন করা যাবে সেই নিয়ে কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই???উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দ্বায়িত্ব কার?
সঠিক সময়ে সরকারের দ্বারা যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়ার কারনে গণ-পরিবহন, গার্মেন্টস, পর্যটন কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র শপিংমল সহ সকল কিছু ‘স্বাস্থ্য বিধি মেনে’ চলার পরেও করোনার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা যত টা আশংকা হয়েছিল ততটা হয় নাই। বর্তমানে এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ৮ মাস পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় স্থবির করে রাখা হলেও ভবিষ্যতে কবে নাগাদ আবার বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে সেটা কারো জানা নেই, বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলার কারণ হলো দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে’ পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বাকি পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নাই।
এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলের এ-লেভেল, ও-লেভেলের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া গেল, কিন্তু বাকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেটা কেন হয় নাই সেটা অজানা। করোনা প্রকোপে বিপর্যস্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ইউরোপের জার্মানি, বৃটেন নন- এসেন্সিয়াল জায়গা লকডাউনে বন্ধ রাখলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিকই চালু রেখেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া একটা মানবিক দ্বায়িত্ব’।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা আছে তারা অন্তত স্বাস্থ্য বিধি, সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে অন্য দশ জনের চেয়ে একটু হলেও বেশী সচেতন,আর সেখানে চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে,কারা কোন দিন আসবে কিভাবে থাকবে অর্থাৎ যেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব সেইখানেই বন্ধ রাখা হচ্ছে।।যেখানে ফুটবল ম্যাচের জন্য ৮ হাজার মানুষকে অনুমতি দেওয়া যায়, মাঠে গিয়ে খেলা দেখার সেখানে কি প্রতিদিন মোট অনধিক ৫০০ জন শিক্ষার্থীর বাকী থাকা পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া যায় না।
আমাদের বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমাদের তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম মাত্র অনলাইনে ক্লাসের জন্য যে দীর্ঘ সেশন জটের আশংকা করা হচ্ছে সেইটার সমাধান কি? কোন মাষ্টার প্লান কি আছে, যেখানে কিভাবে এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যায়। সেশন জটের কারনে যে সময় নষ্ট হচ্ছে সেটার জন্য কি সরকারি চাকরির প্রবেশের জন্য বেধে দেওয়া সময়সীমা বৃদ্ধি করা হবে কি না?
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।