বাবরি মসজিদ ভেঙে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত

দিলীপ ঘোষ
দিলীপ ঘোষ  © সংগৃহীত

কী ঘটেছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর এবং কেন ঘটেছিল, সে কথা এখন বোধহয় আমরা সবাই জানি। নতুন করে কাউকে জানানোর দরকার সম্ভবত আর নেই। তবু বাবরি ধ্বংস মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে যেহেতু কলম ধরছি, সেহেতু প্রথমেই বলতে চাই, বাবরি ভেঙে দেওয়া একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। ওই দিনটা ছিল ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মতো।

ভারতের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার লড়াই ওই দিন এক চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিল, যা পূর্ণতা পেল ২০২০ সালের ৫ আগস্ট তারিখে পৌঁছে।

পড়ুন: বাবরি ধ্বংস ‘পরিকল্পিত নয়,’ ৩২ অভিযুক্তের সবাই খালাস

বাবরি আর নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে ওই স্থান রামমন্দিরের। সেখানে রামমন্দির তৈরির কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। তাই বাবরি ধ্বংস মামলার রায়ের এখন আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা আছে বলে মনে হয় না। মামলাটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে।

তবু এ প্রসঙ্গে যখন আর এক বার কথা বলতেই হচ্ছে, তখন বলব, আমি মনে করি না বাবরি ভেঙে কোনও অন্যায় করা হয়েছিল। এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে অযোধ্যায়। মসজিদটা না ভাঙা হলে কখনও কি এই দিনটা আমরা দেখতে পেতাম? ‘বিতর্কিত’ নাম দিয়ে রামজন্মভূমিকে তো সারা জীবনের জন্য তালাবন্দি করে রাখার বন্দোবস্ত হয়ে গিয়েছিল! ১৯৯২ সালে মসজিদটা না ভাঙলে ওই ‘বিতর্ক’ সমাধানের চেষ্টা হয়তো শুরুই হত না।

মসজিদ ভাঙা হল বলেই আবার জোরকদমে বিচার শুরু হল। মসজিদ ভাঙা হল বলেই নানা অজানা তথ্য সেখান থেকে উঠে এল। সেই সব তথ্যের উপরে দাঁড়িয়েই তো রামমন্দিরের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছিল। মসজিদটা না ভাঙলে তো এই সবই চাপা পড়ে থাকত। সুতরাং মসজিদ ভাঙা জরুরি ছিল। ওই ঘটনা ঠিক ছিল, নাকি ভুল হয়েছিল, তা নিয়ে এতদিন বিচার চালিয়ে যাওয়ার কোনও যৌক্তিকতা আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছিলাম না। কারণ, মসজিদ ভাঙা জরুরি ছিল বলেই যদি ধরে নিই, তা হলে সে ঘটনায় কে জড়িত ছিলেন, কে ছিলেন না, তার বিচার করে আর কী হবে? তার প্রয়োজনটাই বা কোথায়?

সকলেই জানেন যে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বিরাট জমায়েত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ জনতার রোষে মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল। সেই লক্ষ লক্ষ লোকের মাঝখান থেকে কয়েকজনকে নিশানা করে বিচার চালিয়ে যাওয়ার অর্থ কী? আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই কয়েক জনকে নিশানা করে নেওয়া হয়েছিল।

আমি আবার বলছি, রামমন্দির আন্দোলন ছিল দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। রামজন্মভূমিতে রামলালার মন্দির গড়ার অধিকার অর্জনের মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার কথায় বা আপনার কথায় ওখানে রামমন্দির হচ্ছে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে রামমন্দির তৈরি হচ্ছে। আদালতের সে রায় সকলেই মেনে নিয়েছেন। এমনকি, বছরের পর বছর যে মুসলিমরা মামলা লড়ছিলেন, তাঁরাও রামমন্দির মেনে নিয়েছেন। গোটা দেশ ওখানে রামমন্দিরই চেয়েছে। সুতরাং মসজিদ ভাঙা উচিত ছিল নাকি অনুচিত, তা নিয়ে এতদিন ধরে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না।

সবশেষে বলব, বাবরি ভেঙে দেওয়ার ঘটনাটা ছিল একটা রাষ্ট্রবাদী শক্তির উত্থানের ঘটনা। ওই ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাভিমানের সম্পর্ক রয়েছে। সেই রাষ্ট্রীয় স্বাভিমানকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বারা রামজন্মভূমিতে ভূমিপূজন এবং নতুন মন্দিরের শিলান্যাস পরিণতি দিয়েছে সেই দীর্ঘ সংগ্রামকে। তার পরেও বাবরি ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে আইনি টানাপড়েন যে এত দিন চলতে থাকল, সেটাই অযৌক্তিক। [লেখাটি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত]


সর্বশেষ সংবাদ