এক খুনের শোক না কাটতে কাটতে আরেক খুন

এক খুনের শোক না কাটতে কাটতে আরেক খুন, এক রক্তের দাগ না মুছতে মছতে আরেক রক্ত। বিশ্বজিৎ থেকে আবরার একের পর এক বর্বরতম নির্মমতা ও নৃশংসতা। নৃশংসতা ও বর্বরতার পর জড়িত নরপশুদের দাম্ভিকতা ও প্রশান্তির হাসি সুচারু রুপে কার্যহাসিলের জন্য, আর অন্য দিকে স্বজনদের আহাজারি। দেশ-জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের কোন ধরনের ট্রান্সফরমেশন হলে সাবলীলায় এসব নিষ্ঠুরতা করা যায় বলতে পারেন? নৃশংস, বর্বর, অমানুষিক এই অন্ধকার সময়ের শেষ কোথায়? চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্ক ও দুর্নীতিবাজ কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর কালো অধ্যায় শেষ হবে কবে? কবে আসবে আলো? নাকি কোনো দিনই আর দেখা মিলবে না সেই আলোর। কোথাও কেউ নেই প্রতিকার করার। চোখের অশ্রু আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনাই কি আবরার, বিশ্বজিৎ, খাদিজা, তনু, রিসাসহ সকল অসহায় পরিবারের শেষ সম্বল?

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস ছাত্রদের অধিকার আদায়সহ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল গনতন্ত্রিত আন্দোলনে তাদের ভূমিকার জন্য সোনালী অতীত। সেই অধিকার আদায়ের ছাত্র রাজনীতির ভিত্তিটাই আজ পঁচে গেছে। তাই চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্ক ও দুর্নীতিবাজ কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মির উত্থান হয়েছে। আবরার ফাহাদকে নির্মম, নিষ্ঠুর কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী। আবরার এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া মেধাবী দেশপ্রেমিক। একই সঙ্গে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটে। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন থাকায় ও বেছে নেয় বুয়েটকে। দেশের স্বার্থে স্ট্যাটাস দেয়ায় মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি বুয়েটের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নামের কতিপয় কুলাঙ্গাররা।

কেন খুন করা হলো আবরারকে? ভারত-বাংলাদেশ অসম সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলার কারণে? বিএনপি-জামাত-শিবির করার কারণে? দেশের প্রচলিত আইনে এসব কারণে কাউকে হত্যা করার সুযোগ কি আছে? কাউকে পেটানোর বা হত্যা করার অধিকার কি ছাত্রলীগকে দেয়া হয়েছে সংবিধানে? এসবের উত্তর হচ্ছে, না। কেউ ভারতের সমালোচনা করলে, সরকারের ভারতনীতির সমালোচনা করলে, ভিন্নমত পোষণ করলে এমনকি কেউ বিএনপি-জামাত-শিবির করলেও এ কারণে তাকে হত্যা, অত্যাচার, আটক বা পুলিশের কাছে সোপর্দ করার অধিকার নেই ছাত্রলীগের বা অন্য কারো। অথচ গত দশ-বারো বছরে বিশ্বজিৎ থেকে আবরার এরকম নৃশংস ও দানবীয় কাজ বহুবার করেছে তারা। বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ কর্তৃক। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত নয় জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মিকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৯ জনের বিরুদ্ধে।

আবরার হত্যাকান্ডের নৃশংস, বর্বর বা অমানুষিক দানবীয় কান্ড কোনো একক শব্দে প্রকাশ করা যায় না। এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে গনমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র। হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে। সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, সাধারণ ছাত্রসমাজ ও দেশবাসী এই নির্মম হত্যাকান্ডের নিন্দা ও বিচার দাবি করেছে। আবরারের সহপাঠিদের দাবি সাম্প্রতিক একটি ইস্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা আবরারকে ডেকে নিয়ে পিঠিয়ে হত্যা করে। আবরার ফাহাদ ইলিক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল-ই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। হত্যার পর হত্যাকারীরা আবরারের নিথর দেহ দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে যায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় আটক ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মোস্তাকিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, গ্রন্থ ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্সি, সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু।

 এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। আর আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ ১৯জনকে আসামী করে চকবাজার থানায় ছেলে হত্যার মামলা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদ হত্যার ঘটনায় মোট নয়জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জড়িত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডিবি যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজ দেখে ছয়জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, রোববার রাত ৮টার দিকে উপ আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহার নেতৃত্বে তিন ছাত্রলীগ নামধারী কুলাঙ্গার আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে তাকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে ওই কক্ষে আরো কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ডেকে এনে আবরারকে মারধর করা হয়। মারধর করতে করতে তার থেকে বিভিন্ন জবানবন্দী আদায় করার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতারা। একজন স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করে। এক পর্যায়ে রাত ৩টার দিকে আবরার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে যায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।

এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবরারের নিথর দেহ দেখে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসক ও হল প্রশাসনকে খবর দেন। চিকিৎসক এসে আবরারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। এরপর হল প্রশাসন সকাল ৬টার দিকে আবরারের নিথর দেহ প্রথমে হল ক্যান্টিনে নিয়ে আসেন। এরপর সেখান থেকে সাড়ে ৬টা দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাসুক এলাহী জানান, রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিঁড়ির পাশে ছেলেটিকে পড়ে থাকতে দেখি। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।

আবরারকে মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের একজন, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ঘনিষ্টজনকে জানান, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরবর্তীতে চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ফাহাদের একজন রুমমেট ঘটনার বিষয়ে বলেন, টিউশনি শেষে রুমে রাত নয়টার দিকে আসি। তখন আবরার রুমে ছিলো না। অন্য রুমমেটদের কাছ থেকে জানতে পারি তাকে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের একজন এসে আবরার আমাদের রুমমেট কিনা জানতে চান। আমি হ্যাঁ বললে সিঁড়ি রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে সিঁড়ি রুমের দিকে গিয়ে দেখি তোশকের ওপরে আবরার পড়ে আছে। পরে ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ডাক্তারের ফোন পেয়ে হলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ পড়ে আছে দেখতে পাই। ডাক্তার জানান, ছেলেটি আর নেই। পরে তাকে পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে।

এদিকে দুপুরে আবরারকে যে কক্ষে হত্যা করা হয় সে কক্ষ থেকে দু’টি লাঠি, চারটি স্ট্যাম্প, একটি চাপাতিসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একটি স্ট্যাম্পে শুকনা রক্তের দাগ রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা ডিবি পুলিশ ও চকবাজার থানা পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এছাড়াও কক্ষটি থেকে পুলিশ তিনটি খালি মদের বোতল, একটি অর্ধেক ভরা মদের বোতল। দুপুরে শের-ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি পরিদর্শন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, আবরারকে পিটিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্তে ডিবি, থানা পুলিশ কাজ করছে। যারা জড়িত তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করছি। যারা জড়িত তাদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী তদন্তে চলে আসবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তদন্তে রাজনীতিক প্রভাব পড়বে না। এদিকে ঘটনার পরপরই গাঢাকা দিয়েছেন ২০১১ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থীরা। এ কক্ষের শিক্ষার্থীরাই আবারারকে ডেকে এনে হত্যা করে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ। ওই কক্ষের আরেক শিক্ষার্থী বর্তমানে দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন। মারুফ ইসলাম নামে আবরারের এক সহপাঠী বলেন, ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা। তার বিরুদ্ধে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু সে আমার সাথে এর আগে তিনদিনের তাবলীগে গিয়েছিল।

অসুস্থতা কথা বলে বুয়েটের ভিসি ছাত্রদের অভিভাবক ড. সাইফুল ইসলাম আরবারের জানাজা ও দাফনেও অংশ নেননি। দেখা তো দূরের কথা, কথা বলেননি আবরারের অভিভাবক, স্বজন বা সহপাঠিদের সঙ্গে। তাকে ফোনেও পাওয়া যায় নাই। পরিস্থিতি খারাপ ও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে আবরার হত্যার প্রায় দুই দিন পর কার্যালয়ে আসেন ভিসি। আর, এই নির্মম ও নৃশংস হত্যার ঘটনার পর বুয়েট প্রশাসন চকবাজার থানায় জিডি করেছে। তবে জিডিতে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে এমনটি উল্লেখ করা হয়নি। জিডিতে আবরারের হত্যাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এরচেয়ে একধাপ এগিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, একটি মহল এই হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি প্রচার করছে, ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ায় নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করছে। এহলো আমাদের দলকানা রাজনীতির অবস্থা, সবকিছুতেই নগ্ন রাজনীতির থাবা।

চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্ক ও দুর্নীতিবাজ কতিপয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মি হঠাৎ করে অপরাধী হয়নি এবং আবরার হত্যাকান্ডই তাদের প্রথম অপরাধ নয়। অপরাধীর কোনো দল থাকতে পারে না। অপরাধী যে–ই হোক, তার বিচার হতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বার বার এসব দানব পার পেয়ে যাবে তা হয় না। সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ কেন এত কমে গেল? ভয়াবহ মানবতাবিরোধী নৃশংস এই অপরাধের বিচার সারা দেশবাসী চাই। কিন্ত দেশের বিচারহীন সংস্কৃতিতে হামলাকারী ছাত্রলীগ নামধারী কুলাঙ্গারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিয়ে অতীতের মত জনমনে সংশয় রয়েছে। ছাত্রলীগ নামধারী এসব কুলাঙ্গারদের দায় শাসকদল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এমনকি প্রশাসনও এড়াতে পারে না। ক্ষমতার রাজনীতির এইসব কুশীলবেরা জানে পুলিশ ও প্রশাসন দিয়েও সব সময় ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। তাই ক্ষমতা পাকা রাখতে আর ক্ষমতা বজায় রাখতে তাদের চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্কলীগ ও দুর্নীতিবাজদের সৃষ্টি করতে হয়। অপরাধীদের বিচার না হওয়ার কারণেই সমাজে অনৈতিক ও কুরুচিপূর্ণ সামাজিক ব্যাধি বাড়ছে। চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্কলীগ ও দুর্নীতিবাজদের বিষাক্ত ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের সর্বস্তরের জনগন। এটা সামাজিক শৃঙ্খলার প্রতি মহা চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি বিশ্বজিৎ, রিসা, আফসানা, খাদিজা, তনু, নিতুসহ অন্যান্য নৃশংস ঘটনাগুলোর কোনো বিচার সুরাহা হয়নি। সারা দেশে প্রতিদিনই অসহায় মানুষ চাপাতি, রামদা, হকিষ্টিক, ধষর্কলীগ ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা উত্যক্তের ও পাশবিক কায়দায় হত্যার শিকার হচ্ছে। অথচ সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

এই ধরনের অন্যায় যে করবে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার এই বার্তা না দিতে পারবে, ততক্ষণ এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অপরাধী কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কেউ হলেই মনে করে তার কোনো জবাবদিহি নেই। এ কারণেই অপরাধপ্রবণতা কমে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসব অপরাধ বন্ধে কঠোর হওয়া, কিন্তু রাষ্ট্র আজ ব্যর্থ। এজন্যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সদিচ্ছা ও জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক সরকার অপরিহার্য। কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক সরকার ছাড়া কখনোই সুশাসন, ন্যায়বিচার দুর্নীতিমুক্ত বাসযোগ্য সমাজ গড়া সম্ভব না।

সিনিয়র সাইন্টিষ্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র


সর্বশেষ সংবাদ