পিতাকে রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হচ্ছে, আপনাদের লজ্জা হয় না?
- আমিনুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০১:৫৯ PM , আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯, ০২:১২ PM
আবরার ফাহাদ নামের ছেলেটার বাবা ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মৃত ছেলের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমি আওয়ামীলীগ করি, আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই!’
বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই কথা শুনে আমি লজ্জিত হয়েছি। প্রতিটা বাংলাদেশিরই এই কথা শুনে লজ্জিত হওয়া উচিত। অথচ খেয়াল করে দেখছি, অনেকেই বলছে,
-ছেলেটার পুরো পরিবার আওয়ামীলীগ করে, অথচ ছেলেটাকে এভাবে মেরে ফেলা হলো!
কি অবাক কাণ্ড!
এর মানে কি? আওয়ামীলীগ না করলে, তাকে মেরে ফেলা যাবে? কিংবা আওয়ামীলীগ না করলে বিচার পাওয়া যাবে না?
এক জন পিতা, যার ছেলেকে কিছুক্ষণ আগে হত্যা করা হয়েছে; সে পিতাকে তার মৃত ছেলের দেহের পাশে কেঁদে কেঁদে বলতে হচ্ছে
-‘আমি আওয়ামীলীগ করি, আমার পরিবার আওয়ামীলীগ করে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
মৃত ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে এই পিতাকে রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হচ্ছে। আপনাদের কি একটুও লজ্জা হচ্ছে না? সভ্যতার কোন পর্যায়ে আসলে আপনারা বাস করছেন?
আর আপনার যারা বলছেন আবরার ফাহাদ মেধাবী ছিল, ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল; বুয়েটেও চান্স পেয়ছে। এরপর হা-হুতাশ করে বলছেন, এমন মেধাবী ছেলেটাকে মেরে ফেলল!
এর মানে কি? ছেলেটা যদি মেধাবী না হতো, বুয়েটে না পড়তো; তাহলে কি তাকে এভাবে মেরে ফেলা যেত?
দেখুন, মেধাবী আবরার ফাহাদের মায়ের এখন যেমন কষ্ট হচ্ছে; একজন সাধারণ ছেলে; যে হয়ত ঢাকাতেই জীবনে আসেনি; গ্রামের কোন কলেজে পড়ছে; কিংবা মফস্বলের কোন ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে; তাকে যদি মেরে ফেলে হতো; তার মায়ের কষ্ট কি এর চাইতে কম হতো?
দেখুন, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমাদের আবেগ, আমাদের অনুভূতি; সব কিছুই নির্ভর করে সেই মানুষটার সামাজিক অবস্থানের উপর। সে যে মানুষ ছিল; তার ওই মানুষ পরিচয়টা আর আমাদের চোখে পড়ে না।
চোখে পড়ে সে কি মেধাবী ছিল, সে কি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছিল; নইলে সে কোন দল করতো। আমার ভালোবাসার মানুষ আমার কাছে পৃথিবীর সব চাইতে প্রিয় মানুষ। সে হয়ত আপনাদের কাছে মেধাবী নাও হতে পারে; কিন্তু আমার কাছে তো সে; এই যে গতকাল যেই তিনজন বিজ্ঞানী চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছে ; তাদের মতো মেধাবী।
এখন তাকে ধরে যদি কেউ মেরে ফেলে; তখন আপনার হয়ত মনে হবে- ঠিক আছে, একটা সাধারণ ছেলেকে মেরে ফেলেছে। এ আর এমন কি!
কিন্তু আমার কাছে তো সে আমার প্রাণে'র চাইতেও প্রিয়। মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখুন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মেধাবী নয়। সভ্যতা এবং অসভ্যতার মাঝে একটা ফাইন লাইন আছে। সেটা বুঝতে শিখুন। নইলে এভাবেই চলবে!
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়