কেন আমরা পাল্টা আঘাত করি না?

বগুড়ায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠেছে। সোমবারের ওই হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরুরহক নুর গুরুতর আহত হয়েছেন। এখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, রাতুল, মশিউর সহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। তারও একদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গেলে অনুষ্ঠানস্থলে তালা ঝুলিয়ে দেয় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

পরপর দুটি ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এমনকি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিও এ ব্যাপারে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। সংগঠনটির এমন আচরণে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

অনেকে আবার এর পাল্টা জবাব কেন দেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এসব বিষয় নিয়ে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি বলেন— “অনেকে বলেন, আপনারা শুধু মাইর খেয়ে যান, পাল্টা মাইর কেন দেন না?  তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা।

—দেখুন আমরা চাই সমাজটাকে পরিবর্তন করতে। আমরা যদি তাদের মত তাদের উপর হামলা করি, তাহলে তাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তখন তারা আমরা তো একই হয়ে গেলাম।

তাদের ফাঁদে পড়ে আমরা যদি তাদের গায়ে আঘাত করি, তাহলেই তো আমরা ধৈর্যের কাছে পরাজয় বরণ করে নিলাম। আমরা জেল, জুলুম, হামলা, মামলা সহ্য করেই বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। আমাদেরকে তারা একদিন মারবে, ১০ দিন, ১মাস, ১ বছর, ১০ বছর মারবে। এরপর? তারা মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে যাবে। তখন হয়তো তারাও বুঝবে, ভুল করছি, আমরা আসলেই ভুল করছি। বিনাদোষে যাদেরকে মারছি, তারা তো আসলেই ভালো। এতো মাইর দিলাম, বিনিময়ে তাদের সাথে দেখা হলে মিষ্টি হেসে জিগ্যেস করে, ভাই কেমন আছেন?

জী, শত্রুকেও আমরা বুকে টেনে নিতে চাই। ভালবাসা দিয়ে তাদের ভুল ভাঙাতে চাই। আমরা সমাজে হিংস্রতা ছড়াতে আসিনি, আমরা আসিনি ত্রাসের রাজত্ব করতে, আমরা আসিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে। আমরা দেশের মানুষের কাছে শান্তি, সম্প্রতি, সুখের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ভালবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাই।

রাস্তাঘাটে আপনি যখন হটাৎ কোন কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হন, তখন কি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় কুকুরকে পাল্টা আক্রান্ত করা? সম্ভব নয়৷ আমরা শান্তিপ্রিয়। আমাদের দ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন যেমন একটি অহিংস আন্দোলন ছিলো, আমরা ঠিক এই আদর্শে উজ্জীবিত। আমাদের অহিংস বাণী পৌঁছে দিতে চাই দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে।

আমরা বিশ্বাস করি, অত্যাচারীরা চিরদিন টিকে থাকতে পারেনা। অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন করতে করতে তারা নিজেরাই একদিন ক্লান্ত হয়ে যাবে। ইতিহাসে এমন হাজারও ঘটনা আছে। হিটলারেরও একদিন পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। সকল শোষণকারীদের পরাজয় বরণ করতে হবে। দিনশেষে, একদিন সবাইকে হার মানতে হবে। আর সবকিছুকে হার মানিয়ে জিতবে শান্তি, শান্তি এবং শান্তি।”


সর্বশেষ সংবাদ