এই ‘ভুলে ভরা’ বিসিএস প্রশ্নপত্র কারা তৈরি করল?
- ড. নাদিম মাহমুদ
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫১ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৮ PM
গতকাল দেশের কর্ম কমিশনের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিসিএসের প্রশ্নপত্র দেখার পর মনে হয়েছে, যারা বিসিএসে বাছাই করা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা আসলে কারা?
যে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সঠিক বানান পড়তে হয়, জানতে হয়, সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে লিখেছে ‘গনঅভুধানের‘, গণমাধ্যমকে লিখেছে ‘গনমাধ্যম‘, জন্মহার শূন্যের কোটায় লিখছে ‘শুনে‘ কোটায়‘, উচ্চারণকে ওরা লিখেছে ‘উচ্চারন, পরিমাণকে লিখেছে ‘পরিমানে‘, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রী‘, প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রধান মন্ত্রী‘, কারণকে লিখছে কারন, দক্ষিণ সুদানকে ‘দক্ষিন সুদান‘ পারমাণবিক বোমাকে লিখেছে ‘পারমানবিক‘।
১০০ টি প্রশ্নের বানানের এই হাল নিয়ে কথা বলা ছাড়া প্রশ্নকর্তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। আমি নিশ্চিত নই, এই প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে কেউ পাকিস্তানের নাগরিক কি না, তবে যেভাবে এখানে ‘পাকিস্তানের প্রেম‘ ফুটে তোলা হয়েছে, তাতে বলায় বাহুল্য বিসিএসে পাকিস্তানের উপস্থিতি দেখবার মতো ছিলো।
যেমন এবার পাকিস্তানকে ঘিরে প্রশ্নপত্রে ছিল, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত? পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন? ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি নিয়ে প্রশ্ন।
যে দেশটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে তাঁদের পাঠ্যবইগুলোতে ‘ভারতের ষড়যন্ত্র‘ হিসেবে দেখে, মুক্তিযোদ্ধাদের বলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী‘ সেই দেশের ইসহাক দারের রাজনৈতিক দলের পরিচয় জানতে হবে আমাদের বাচ্চাদের, যারা কয়েকদিন পর দেশটা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। নিজেদের দেশের তিস্তা, ফারেক্কা পানি সমস্যা না জানিয়ে ওদের দেশের পানি সমস্যা নিয়ে আমাদের জানতে হবে?
২৬ মার্চের ‘স্বাধীনতা ও জাতীয়‘ দিবসটিকে প্রশ্নপত্রে ‘স্বাধীনতাকে‘ উড়িয়ে দিয়ে লেখা হয়েছে কোনটি জাতীয় দিবস। নিজ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয় তুলে না ধরে, আমাদের গেরিলাদের পরিচয় না জানতে চেয়ে, ওরা প্রশ্ন করেছে, তুরস্কের Kurdistan Workers‘ Party নামক একটি জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ে, যে সংগঠনটিকে তুরস্ক, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তারাজ্যসহ বেশ কিছু দেশ ‘সন্ত্রাসবাদী‘ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের বিষয়ে জানতে হবে আমাদের ছেলে-মেয়েদের।
কী অদ্ভুত প্রশ্নপত্র, যেখানে সিংগাপুরের মুসলিম রাষ্ট্রপতির পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে অথচ আধুনিক সিংগাপুরের রুপকার লি কুয়ান ইউ বিষয়ে জানা শোনা অধিক কাজের।
আয়নাঘর কিংবা সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্যের কমিশনের প্রস্তাব বিষয়ক ‘অপ্রতিষ্ঠিত‘ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই সরকারের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
পাবলিক প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যদি এইভাবে প্রশ্নকর্তাদের দ্বারা মূল্যায়িত হয় তাহলে বলতে দ্বিধা নেই ‘বর্তমান কর্মকমিশনের কর্তারা‘ আসলে এই পরীক্ষাকে গুরুত্বহীন মনে করছে। সেটা না হলে কীভাবে একটি প্রশ্নপত্রে এইভাবে ভুল বানানের ছড়াছড়ি হয়? কীভাবে অসাড় ও গুরুত্বহীন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের জানতে হয়? (মতামত লেখকের নিজস্ব}
লেখক: ড. নাদিম মাহমুদ (লেখক ও গবেষক)