আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজ আজ কোথায়?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫০ PM , আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০১:১১ AM

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ নিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এরশাদ হালিম। সোমবার (১৫ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে এই খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন তিনি। সেখানে তিনি চলমান আন্দোলন নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের নিশ্চুপ থাকার সমালোচনা করছেন। নিচে সেই খোলা চিঠিটা তুলে ধরা হলো-
চাকরি কিংবা ক্যারিয়ারের ভয়ে আমরা সবাই নীরব। স্ব স্ব মুখখানা তালাবদ্ধ করে ঘরে বসে আছি। অথচ বুদ্ধিজীবীরা হবে দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। তারা হবে কোনো সমাজের কাণ্ডারি ও সঠিক পথের দিশা।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে কেমন বুদ্ধিজীবী আমরা? রসায়নের ভাষায় বলতে হয়, বয়েলের সূত্রের মতই হয়ত-বা "শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী সমাজের সৎ সাহস, ব্যক্তিত্ব এবং নৈতিকতাও অনেকটা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থান্ধতার সাথে ব্যস্তানুপাতিক।"
এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে আমরা দায়মুক্তি দিব নিজেদের বিবেককে? তবে এটাও ভাবা দরকার আমাদের বিবেক আদৌ কার্যকর আছে কিনা। মূলত বিবেক আর নফস শব্দ দুটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ধারার দুটি অস্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। হয়ত-বা আমাদের বিবেকগুলো পুরোপুরি মরে গেছে। অন্যদিকে পঞ্চ রিপু পরিচালিত নফসগুলো ষোল আনাই কার্যকর আছে। শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। কারণ ওরা তো দুর্বল। ওরা আমাদেরকে আর কিই-বা দিতে পারবে? অন্যদিকে ওদের বিরোধী শক্তিকে হাতে রাখতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে পদ-পদবিসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আমরা বাগিয়ে নিতে পারব। তবে একথা শিরোধার্য যে, শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক সমাজের পেশাগত অস্তিত্ব। ওদের প্রলয় মানে আমাদের পেশার শতভাগ বিনাশ। উপরন্তু রিজিকে যা নির্ধারিত আছে তার অতিরিক্ত কিছুই ভোগ করা যায় না।
এটাই যদি হয় আমাদের আসল চেহারা তবে কিভাবে ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সম্মুখে নিজেদের ঢোল আমরা নিজেরাই পিটাব? আমরা কথায় কথায় মুখে আওড়াবো সততা আর নৈতিকতার ফাঁকা বুলি? মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, পাপ বাপকেও ছাড় দেয় না। বস্তুত নিজেদের অস্তিত্বের কবর আমরা নিজেরাই খনন করছি।
অতএব আত্মশুদ্ধির সময় এখনও হাতে আছে। নিশ্চিত অনুশোচনা এড়াতে যৌক্তিক ও ন্যায় সঙ্গত দাবি আদায়ে, অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণে চলমান কোটা সংস্কারকরণ আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছায়া হয়ে না দাঁড়ালে এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত একদিন আমাদের নিজ সন্তানদের বহন করতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা প্রকৃতপক্ষে আমাদের সন্তান-সন্ততিতূল্য। হৃদয়ে আত্মগ্লানির নরক যন্ত্রণা আসার আগেই ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার না হলে একদিন চিরতরে আমরা নিক্ষিপ্ত হব ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের শিক্ষক সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রলয়যজ্ঞ নিয়ে গবেষণা করবে। আমরা হব পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘৃণিত জাতির মত ইতিহাস মাত্র। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সুমতি দান করুন।
পুনশ্চঃ আমাদের স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, মহান আল্লাহই সর্বোত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এক সত্তা যাঁর অস্তিত্ব ও সর্বময় ক্ষমতাকে অস্বীকার কিংবা অসম্মান করলে নিশ্চিত প্রলয়যজ্ঞ অবধারিত।
ড. মো. এরশাদ হালিম
অধ্যাপক ও গবেষক
সিন্থেটিক অর্গানিক কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস
রসায়ন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা ১০০০।