সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ‘গরিবের বিদ্যালয়ে’ পরিণত হয়েছে

মো. ইমন হোসেন
মো. ইমন হোসেন  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মূল ভিত্তিই হলো প্রাথমিক শিক্ষা। আর এই  শিক্ষা অর্জনের সর্বোচ্চ একটি মাধ্যম হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও কিন্ডারগার্টেন সহ বেসরকারি প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান তো রয়েছে। তবে অবশ্যই আমাদের আলোচনা কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের বা গ্রামের দিকে এমনকি শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। 

কারণ স্পষ্ট, তা হলো যে দেশটিতে এখনও বেশিরভাগ সংখ্যক মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। যখন কোনো একটি ভবনের গঠন দুর্বল হয় তখন অল্প ঝড়ে ভবনটি ভেঙে বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যেমন প্রবল, ঠিক তেমনই, যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা, শিক্ষক, পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে কাজ না হয়, তখন এই জাতির মেরুদণ্ডের কশেরুকা ভেঙে যাওয়া বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশিই হবে। 

প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো, এমনকি শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ, শিক্ষার্থী কমার অন্যতম কারণ হলো মানসম্মত শিক্ষার অভাব। মানসম্মত শিক্ষার অভাবে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ‘গরিবের বিদ্যালয়ে’ পরিণত হয়েছে।

গাইবান্ধার শিক্ষক রঞ্জিত সরকার সম্প্রতি উত্তর জেলার এক সংলাপে এমনই করুণ বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। আর্থিকভাবে সক্ষম অভিভাবকরা এখন তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে উন্নত শিক্ষার জন্য কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করাতে পছন্দ করেন বলে জানান তিনি।  

তিনি বলেন, ‘এমনকি সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরা প্রায়শই তাদের সন্তানদের এ প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তি না করা বেছে নেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষার অভাবের প্রধান কয়েকটি কারণ রয়েছে প্রথমত হলো শিক্ষকদের সংখ্যা এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যার অনুপাত, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সুবিধা এবং সবচেয়ে হতাশার হলো শিক্ষক দের মান উন্নয়নে অনীহা। 

এসডিজি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ১:২০ হওয়া উচিত যা বাংলাদেশে ১:৫৪। বাংলাদেশে যে অনুপাত চলমান, তাতে শ্রেণীকক্ষে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আলাদা যত্ন নেওয়া কঠিন। 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় সুন্দর ভবন পেয়েছে, কিন্তু বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তার বেহাল দশা তাদের নতুন অবকাঠামোর সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে দেয় না।  উপকূলীয় এলাকা ও প্রত্যন্ত চরগুলোতে এ সমস্যা প্রকট।  

এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দুর্বল শ্রেণীকক্ষ, দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা এবং লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমে প্রবেশাধিকার এবং স্বল্প অর্থায়নের মতো দুর্বল অবকাঠামোতে ভুগছে যাকে তারা মানসম্মত শিক্ষার প্রতিবন্ধক বলে অভিহিত করেছে।

তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ এবং সরকারের উচিত, অবকাঠামো উন্নত করতে, শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করতে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও বেশি সুবিধা নিশ্চিত করতে আরও ফান্ড  বরাদ্দ করা। 

শিক্ষা বাজেটের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ করা উচিত। তাছাড়া ও  শিক্ষার গুণমান এবং কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উন্নত করা প্রয়োজন।  

শিক্ষকের উপস্থিতি এবং কর্মক্ষমতা নিরীক্ষণের জন্য প্রক্রিয়া প্রয়োগ ও করা যেতে পারে। তবে যখন শিক্ষকদের এতো সকল প্রক্রিয়া আওতাভুক্ত করবেন এবং তখনই  এর সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি প্রয়োজন কারণ বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে, তাঁরা যেন চিন্তাহীন ভাবে, শিক্ষার মান উন্নয়নে নিজের সংযুক্ত করতে পারে। দায়বদ্ধতা এবং সহায়তা বৃদ্ধির জন্য স্কুল পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করা জরুরি, এতে প্রান্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো শিক্ষার্থী ঝড়ে পরা রোধ হবে, আমার বিশ্বাস। 

উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের বিকল্প নেই। প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর জীবনে ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং শেখার ভিত্তি স্থাপন করে। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া অপরিহার্য। তাই একটি প্রগতিশীল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট সমাজ গঠনের জন্য সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা জন্য সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।

লেখক, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ। 


সর্বশেষ সংবাদ