প্রসঙ্গ হিট অফিসার: বাঙালির মস্তিষ্কের ক্ষমতায়ন হয়নি

লেখক
লেখক  © ফাইল ছবি

গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিট অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সংবাদ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বুশরা আফরিন। তিনি বাংলাদেশসহ পুরো এশিয়ায় প্রথম চিফ হিট অফিসার (সিএইচও)। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যার্ডিয়ান আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের রেজিলিয়েন্স সেন্টার তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছে।

মূলত বিশ্বের বিভিন্ন শহরে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজের অংশ হিসেবে চিফ হিট অফিসার নিয়োগ করে আর্শট-রক। স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামিতে প্রথমবারের মতো চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বে প্রথমবারের মতো চিফ হিট অফিসার (চিএইচও) পদ তৈরি করে পাইলট প্রজেক্টে নিয়োগ দিয়েছে জাতিসংঘের এই সহযোগী সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে নিয়োগ পান বুশরা আফরিন। যিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা।

ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে উত্তর সিটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রক ফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার (আর্শট-রক)। এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছে। এজন্য তারা বিভিন্ন দেশে বড় বড় শহরে নিজেদের অর্থে ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দিয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্র মতে, বুশরা আফরিনের নিয়োগ কর্পোরেশন থেকে দেওয়া হয়নি। এর সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই। কর্পোরেশন থেকে তিনি সুযোগ-সুবিধাও পাবেন না।শুধু তাই নয় সিটি কর্পোরেশনের অর্গানোগ্রামে ‘চিফ হিট অফিসার’ নামে কোনো পদও নেই। ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টায় যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দিয়েছে। বেতন বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ওই সংস্থা তাকে দেবে। বুশরা আফরিন রকফেলার ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা, কর্পোরেশনের নয়।

এর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, তিনি সরকারি ভাবে কোনো চাকরি পাননি বা সরকারি বেতন ভাতাও নিচ্ছেন না বা চাকুরিটি মেয়রের মেয়ে বলেই অবৈধ ভাবে বিদেশি সংস্থা তাকে নিয়োগ দিয়েছে এমনও না। তাহলে সাধারণ ভাবেই দেশের বিরুপ জলবায়ু প্রভাব ও তাপমাত্রা নিয়ে এই পদক্ষেপ নিসন্দেহে ইতিবাচক সংবাদ হিসেবে আলোচিত হতে পারতো।

তাহলে সাধারণ এই সংবাদটি কিভাবে এত নেতিবাচক ট্রল সংবাদে রূপ নিলো এটাই আমাদের প্রশ্ন। শুধু যে ফেসবুকে ট্রল বা ভাইরাল হয়েছে এমন না বরং প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে এটি সামনে এনেছে।

আপাতদৃষ্টিতে আমার কাছে মনে হয়েছে এই সংবাদটি যতটা না জলবায়ু বা প্রশাসনিক কারণে গণমাধ্যম বা নেটিজেনরা গুরুত্ব দিয়েছে তার চেয়েও বড় কারণ ইনি একজন নারী এবং নারীই না বরং সুদর্শণা। ফলে বাঙালির মস্তিষ্ক সেই হিট অফিসারকে 'হট' অফিসারে রুপান্তরিত করেছেন। তাকে আর তার কাজের দক্ষতা বা ডিগ্রি দিয়ে সমালোচনা করার প্রয়োজন নেই বরং তার আরও হট বা নগ্ন ছবি দিয়েই বিচার করতে হবে। তাই অনেকেই তার তুলনামূলক খোলামেলা পোশাকের ছবি ভাইরাল করতেও দ্বিধা করেননি। অথচ মজার তথ্য হলো আফরিন বুশরাই শুধু নারী হিসেবে নিয়োগ পাননি বরং বিশ্বের একই পদ নিয়ে একই কাজ করছেন আরও সাত নারী।

কর্তৃপক্ষের মতে,যেহেতু নারীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ব্যাপার বেশি প্রভাব ফেলে। মূলত এ কারণে নারীদেরই পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানা যাচ্ছে।

এই স্বাভাবিক বিষয়টি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে যে উত্তাপ ছড়িয়েছে এত উত্তাপ হয়তো গত কদিনের আবহাওয়া সংক্রান্ত জলবায়ু উত্তাপকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার সাথে নিয়োগ পাওয়া বাকী নারীরাও হয়তো অবাক হবেন আমাদের এই নগ্ন চিন্তার উত্তাপ দেখে।

বর্তমান সরকারের হাত ধরেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, ক্রমান্বয়ে সেই ক্ষমতায়নের ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে। কিন্ত আমাদের মস্তিষ্কের সাংস্কৃতিক মানসিক উন্নয়নের ক্ষমতায়ন হয়নি।গণমাধ্যম থেকে গণমানুষ সবাই যেন রবি ঠাকুরের "রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি"তে অবস্থান করছেন।

লেখক: নাট্যকার ও কলামিস্ট
ইমেইল: kabilsadi@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ