থাকছে না নিবন্ধন পরীক্ষা, যেভাবে হবে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ
নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ এনটিআরসিএ’র
- রুম্মান তূর্য
- প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৩৮ AM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৬ PM
দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রার্থীদের বসতে হয় নিবন্ধন পরীক্ষায়। তিন ধাপে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকতার সুযোগ পান। ২০০৫ সালের পর থেকে শিক্ষক নিবন্ধন না থাকলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ ছিল না। ওই বছর থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছিলো। তবে দেড় যুগ পর এসে উঠে যাচ্ছে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা। বদলে যাচ্ছে এনটিআরসিএও।
জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ নামে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সরকার। আর এজন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০০৫ও পরিবর্তন। এটা পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত করে প্রকাশ হয়েছে খসড়াও।
আরও পড়ুন: এনটিআরসিএ’র নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ
নতুন এ আইন অনুসারে শিক্ষক নিবন্ধন নয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহী প্রার্থীদের বসতে হবে নিয়োগ পরীক্ষায়। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। নতুন আইনের খসড়ায় বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই নতুন এ আইনের খসড়া প্রকাশ করে জনমত ও পরামর্শ জানতে চায় এনটিআরসিএ। সব প্রক্রিয়া শেষে এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষে বদলে যাবে।
এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে আইনের খসড়াটি প্রকাশ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই খসড়া আইনের বিষয়ে কোনো মতামত/পরামর্শ থাকলে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এনটিআরসিএ’র ই-মেইলে (ntrca2005@yahoo.com) প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০৫ রহিতক্রমে উহার বিধানাবলী বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৩ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণয়নকৃত খসড়া আইনের কপি এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে (www.ntrca.gov.bd) আপলোড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিআরসিএ, ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশ কর্তৃপক্ষ’ নামে আসছে
নতুন এ কর্তৃপক্ষের কাজ কী হবে-তা নিয়ে আইনের খসড়ায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। খসড়া অনুসারে, কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শূন্যপদের চাহিদা সংগ্রহ করবে। পরে ‘বিধি দ্বারা নির্ধারিত’ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করে। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে মেধা অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন ও তাদের নিয়োগ সুপারিশ করবে। ফলে নতুন এ আইনটি পাস হলে আগের মতো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় বসতে হবে না প্রার্থীদের।
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষের কাজ নিয়ে আইনের খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা ও নিয়োগ সুপারিশ খাতে ফি নির্ধারণ ও আদায় করবে। শিক্ষকতা পেশার উন্নয়ন এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পরামর্শ দেবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন (নিয়োগের জন্য) করবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে সরকারের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
এই আইনের অধীন অন্যান্য বিধানের উদ্দেশ্য পূরণ করতে প্রয়োজনীয় ও আনুষঙ্গিক কাজগুলো করবে। এছাড়া বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন এবং সরকারের দেয়া অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হবে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে।
শিক্ষক নিয়োগ বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত নীতিমালা (এমপিও নীতিমালা) অনুসরণ করবে। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ও সুপারিশকৃত প্রার্থীদের তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণ করবে। কর্তৃপক্ষ থেকে নির্বাচিত এবং নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি এমপিওভুক্ত কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শূন্য পদে নির্বাচন ও নিয়োগ সুপারিশের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বয়স প্রযোজ্য হবে।
তবে, এই আইন জারি হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধিত, প্রত্যয়নকৃত এবং নিয়োগ সুপারিশকৃত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে না। নতুন কোনো স্থাপিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা নন-এমপিওভুক্ত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে না। তবে সরকার এসব বিষয়ে সময়ে সময়ে যে নির্দেশনা বা অনুশাসন দেবে তাই কার্যকর থাকবে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যানি। তবে সংস্থাটির অন্যান্য কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নতুন আইনটি সব প্রক্রিয়া শেষে বহাল হলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হবে না। সরাসরি পরীক্ষা নিয়ে ফলের ভিত্তিতে নিয়োগ হলে কর্তৃপক্ষের কাজ অনেকটা সহজ হবে। পরীক্ষার পর সনদ দিয়ে পরে সুপারিশের পর তা পুনরায় যাচাই প্রয়োজন হবে না। যা শিক্ষক সংকট কমাতে ফলপ্রসূ হবে বলে আশা কর্মকর্তাদের।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে এনটিআরসিএ গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২০১৫ সাল থেকে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষমতা পায় প্রতিষ্ঠানটি।