শিক্ষক নিবন্ধন: পরীক্ষায় পাস করলেও মিলবে না সনদ

পরীক্ষার্থী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়
পরীক্ষার্থী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ফটো

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। লিখিত পরীক্ষায় পাস করলেও নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে না। ১৭তম নিবন্ধন থেকে এমন নিয়ম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে এনটিআরসিএ।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী শূন্য পদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ দেওয়া হবে। প্রাপ্ত শূন্য পদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি সনদ দেওয়া হবে। এতে করে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৪০ নম্বর পেয়ে পাসকারীদের সনদ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে।

জানা গেছে, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিততে পাস নম্বর ৪০। কোনো প্রার্থী ৪০ নম্বর পেলে তাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হবে। এরপর মৌখিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। লিখিততে ৪০ নম্বর পেয়ে মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলেই নিবন্ধন সনদ দেওয়া হত। তবে ১৭তম নিবন্ধন থেকে এই নিয়মের পরিবর্তন করা হচ্ছে।

এনটিআরসি’র একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা গণহারে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে চান না। এতে করে নানা রকম সমস্যা তৈরি  হয়। বিশেষ করে সনদধারী বেকার তৈরি হয়। কেননা কম নম্বরধারীরা কোনো প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পান না। এই অবস্থায় বেকার সনদধারী তৈরি না করে যাদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কেবল তাদের সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ওই সূত্র আরও জানায়, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পূর্বে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের চাহিদা সংগ্রহ করা হবে। বিষয় ভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা বের করে এরপর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ দেওয়া হবে। কোনো বিষয়ে যদি শূন্য পদ না থাকে তাহলে ওই বিষয়ে কাউকে সনদ নাও দেওয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা সবাইকে নিবন্ধন সনদ দিতে চাই না। বিষয় ভিত্তিক শূন্য পদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ দিতে চাই। এর ফলে কেবল পাস করলেই নিবন্ধন সনদ পাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলেন, আমরা নাকি নিবন্ধনধারী বেকার তৈরি করি। তাদের এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। এখন থেকে যে বিষয়ে যত শূন্য পদ পাওয়া যাবে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন থেকেই এটি কার্যকর করা হবে।

১৭তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা মে অথবা জুনে
আগামী মে অথবা জুন মাসে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হতে পারে। এর আগে এপ্রিল মাসে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজ শুরু করা হতে পারে।

জানা গেছে, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) একটি সভা হয়েছে। সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শিগগিরই বিজি প্রেসের সাথে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিজি প্রেসের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এপ্রিল মাসে তাদের হাতে তেমন কাজ নেই। তাই এপ্রিলে ১৭তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানোর বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তারা।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আমরা চেষ্টা করছি এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করার। আমাদের পরীক্ষা নিতে দুইদিন সময় প্রয়োজন। এসএসসি পরীক্ষা প্রতিদিন হয় না। তবে এখানে বড় একটি সমস্যা আছে। সেটি হলো- যারা ১৭তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন তারা ব্যস্ত থাকবেন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে। এছাড়া আমাদের প্রশ্নপত্র এবং খাতা রাখার জায়গা হবে কি না সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কাজেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সম্ভব না হলেও জুন মাসে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করার। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

মে অথবা জুন মাসে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটি নির্ভর করছে আমাদের প্রশ্নপত্র কবে ছাপানো হবে তার ওপর। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এসএসসি পরীক্ষার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। কাজেই ওই সময় পরীক্ষা নেওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ