‘তাইফার শখ ছিল বড় চাকরি করবে’

নিহত তাইফা
নিহত তাইফা  © ফাইল ফোটো

তাইফার (১১) শখ ছিল বড় চাকরি করবে। আমার আদরের একমাত্র মেয়ের সকল স্বপ্ন কেড়ে নিল লঞ্চের আগুন। আমার হাতেই মারা গেছে আমার মেয়ে- কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে থাকা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ মো. বশির উদ্দিন (৩৮)।

শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আর্তনাদ করেন অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া তাইফার বাবা বশির। বরগুনা লোটপাড়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর বায়না ধরে ঢাকা যাবে, ঘুরতে।

আরও পড়ুন: বাসায় বসে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পৌর মেয়র!

বাড়ি যাওয়ার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনার বিষয়ে বশির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার শ্বশুর আর মেয়েকে নিয়ে বরগুনা যাওয়ার জন্য এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে উঠি। ওঠার পর পরই দেখলাম একটা ইঞ্জিন প্রায় বন্ধ হয় আবার চলে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায় তারা বলে, এটা কোনো সমস্যা না। আমি ছিলাম দুতলায়, ইঞ্জিন বরাবর। রাত তিনটা দিকে যখন আগুন লাগে, মেয়েকে লঞ্চ থেকে ফেলে দিয়েছি, তারপর আমি লাফ দিয়ে মেয়েকে ধরেছি। মেয়ের এক হাতে ধরে সাঁতরিয়েছি। কোনো কুল-কিনারা পাচ্ছিলাম না। চারদিকে অন্ধকার ছিল। একটা নৌকা এসে আমাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি হাসপাতালে নেয়। পরে আর কিছু বলতে পারবো না।’

আরও পড়ুন: শঙ্কার মধ্যেই ৮৩৬ ইউপিতে ভোট শুরু

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুইটা ছেলে-মেয়ে। মেয়ে তাইফাই ছিলো আমাদের ঘরে আলোকিত করে আসা প্রথম সন্তান। বরগুনা লোটপাড়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর বায়না ধরে ঢাকা যাবে, ঘুরবে। আমার শ্বশুর আলী শিকদার ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় রোববার (১৯ ডিসেম্বর) মহাখালীর বক্ষব্যাধী হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে নিয়ে যাই। মেয়ের বায়না পূরণ করার জন্য ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাই। মেয়ে ঢাকায় এসে তার বান্ধবীদের জন্য চকলেটও কিনেছিল।’

তিনি বলেন, একটা নৌকা এসে আমাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি হাসপাতালে দিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তাইফা মারা গেছে।

আরও পড়ুন: পুলিশ ট্রেনিংয়ে ডাক পেলেন ভূমিহীন মিম

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ক্যানসারে ভুগছিলেন তাইফার নানা আলী শিকদার। তাকে চিকাৎসা করাতে ঢাকায় যায় তাইফার বাবা, সঙ্গে ঢাকা দেখতে যায় তাইফা। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সদরঘাট থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেন তারা। এরপর লঞ্চটি মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় তাইফার নানা জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিলেও তাইফা ও তার বাবা ডেকে আটকে পড়ে অগ্নিদগ্ধ হন। এরপর জীবন বাঁচাতে তারাও নদীতে ঝাঁপ দেয়। মেয়ের এক হাতে ধরে সাঁতরাতে থাকেন বশির উদ্দিন। পরে একটা নৌকা এসে তাদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাইফা মারা যায়। আর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকেই তার নানা আলী শিকদার নিখোঁজ।’


সর্বশেষ সংবাদ