অনলাইন পরীক্ষায় অনীহা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের জন্য দায়ী শিক্ষার্থীরাই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের অনীহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অপারগতাসহ নানা কারণে বন্ধ রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তীব্র সেশনজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পেছনে শিক্ষার্থীদের অনীহাকেই দুষছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, কয়েক দফায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও অল্পকিছু শিক্ষার্থীদের অনীহার কারণে পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা মৌখিক পরীক্ষা নিতে চাইলে সেখানেও কিছু শিক্ষার্থীদের রয়েছে অঅনাপত্তি। এর ফলে সেশনজট নিরসনে কোনো পদক্ষেপই কার্যকর করতে পারছেন না তারা।

তথ্যমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি সংস্থা ইউজিসি। এজন্য কয়েক দফায় উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে তারা। বৈঠকে অনলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকায় সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে শিক্ষাজীবনে যে দীর্ঘ সেশনজট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে এর জন্য শিক্ষার্থীই দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা আয়োজনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। স্মার্টফোন কিনতে ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীকে ৮ হাজার টাকা করে শিক্ষাঋণ দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বিডিরেন সফটওয়্যারের ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছে ইউনিভার্সিটিগুলো। এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপরও তাদের অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার অনীহা তাদের নেয়া উদ্যোগ ভেস্তে দিয়েছে।

ইউজিসি বলছে, নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও অনলাইনে পরীক্ষায় অনীহা শিক্ষার্থীদের তীব্র সেশনজটের মুখে ফেলবে। সেশনজট থেকে পরিত্রাণ পেতে অনলাইনে পরীক্ষার বিকল্প নেই। আর পরীক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সচিব অধ্যাপক ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরীক্ষা না নেয়ার পেছনে শুধু শিক্ষার্থীদের দুষলেই হবে না। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটিগুলোকেও দায় নিতে হবে। কেননা আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সকল ব্যবস্থা করার পরও তারা পরীক্ষা আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে তারা পরীক্ষা দিতে চায়। তবে অনলাইনে পরীক্ষা হলে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে না। কেননা ক্লাসের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীও অনলাইন পরীক্ষা হলে ভালো সিজিপিএ অর্জন করার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেজন্য তারা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। তবে যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হবে সেটির উপর আমাদের আস্থা নেই। কেননা এই সফটওয়্যারে পরীক্ষা হলে সবাই নকল করবে। ফলে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হবে না। 

এদিকে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোকে পরীক্ষা অথবা বিকল্প মূল্যায়নের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের আপত্তির কারণে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটি কেউ বলতে পারছে না। এই অবস্থায় অনলাইনে পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনলাইনে ক্লাস করলেও শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে অনীহা আছে। ফলে আমাদের ইচ্ছা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ না থাকায় পরীক্ষা নিতে পারছি না।

তিনি বলেন, আমরা চাই শিক্ষার্থীরা পাস করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হোক। তারা একদিকে পরীক্ষা নেয়ার আন্দোলন করে আবার অন্যদিকে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চায় না। বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে চায়। তবে অল্পকিছু শিক্ষার্থীর জন্য আমরা পরীক্ষা নিতে পারছি না।

অনলাইন পরীক্ষায় নকল প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনাজ আরও বলেন, আমি যে সফটওয়্যার আবিষ্কার করেছি সেখানে নকলের কোনো সুযোগ নেই। আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষায় নকল রোধ করা সম্ভব। আমি শিক্ষার্থীদের এসে নিজের চোখে এটি পরখ করে দেখার অনুরোধ করছি।


সর্বশেষ সংবাদ