সীমান্ত হত্যা ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ— দুই দেশের সম্পর্কে আঘাত হানে
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৬ PM , আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৬ PM
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। কিন্তু সীমান্ত হত্যা বা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের মতো কিছু বিষয় এই সম্পর্কের ওপর আঘাত হানে।
আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মোমেন ও ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে ষষ্ঠ যৌথ কনসালটেটিভ কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষ একমত হয়েছি যে কেউ যাতে না মারা যায়। যেসব অঞ্চলে মারা যায় সেখানে যৌথভাবে মনিটরিং করবো। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, ভারতেরও জন্য লজ্জার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে দৃঢ় সম্পর্ক, সেটি একজন মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন পেঁয়াজ একটি ছোট জিনিস। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা হয় তখন এই সম্পর্কে আঘাত হানে।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে এটিকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার। আমাদের দুই দেশের দায়িত্ব আছে এবং সেটি আমরা করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনি। যেমন পেঁয়াজ এবং সেটি হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারের ওপর পড়ে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ডিসেম্বরে ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। তিনি বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে কি হবে সেটি এখনও ঠিক করি নাই। আমরা সম্মত হয়েছি দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। এখন আমরা প্রস্তুতি নেবো। আমাদের হাতে সময় আছে।’ আমরা চাইবো বৈঠকটি যাতে তাৎপর্যপূর্ণ হয়।
তিস্তাসহ অন্য কয়েকটি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা দুই পক্ষ সম্মত হয়েছি। আমরা জোর দিয়েছি এটির বিষয়ে। বাকি আরও ছয়টি নদীর মীমাংসা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তারা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে।’
যৌথ নদী কমিশনের শেষ বৈঠক ২০১০ সালে হয়েছিল এবং এটি দ্রুত করার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগে বৈঠক হয়নি এবং আমার মনে হয় যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছিল না। কিন্তু আমরা সম্মত হয়েছি, এটি হবে। কিন্তু কবে হবে সেটি জানি না।’
লাইন অফ ক্রেডিট বৈঠকে একটি বড় ইস্যু ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। এজন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হয়েছে।’ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও ভারতের রাষ্ট্রদূতের সমন্বয়ের গঠিত কমিটি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী জানান, ‘আমাদের মতো তারাও উদগ্রীব। অনেক ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ, কিছু সমস্যা আছে। যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটি দূর করার জন্য কমিটি হয়েছে।’
ভারতের দিকে আইন-কানুন নিয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘যেমন বলা হয়েছে বিভিন্ন এজেন্সির অনুমতি লাগে। তারপরে কাঁচামালের ক্ষেত্রে ভারত থেকে আমদানির জটিলতা রয়েছে। যে জিনিস বাংলাদেশে সহজলভ্য সেটি আমরা ভারত থেকে কেন আনবো। এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’
করোনাভাইরা (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় একে অপরের সহযোগিতার বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যখনই টিকা বের হবে তখনই সেটি সংগ্রহ করা এবং যে আগে তৈরি করবে তার কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করবো।’
শুধু চীন ও ভারত নয়, বাংলাদেশ অন্য দেশ, যেমন- রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ভারতের টিকা সংগ্রহ এবং বাংলাদেশে উৎপাদন করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে ভারতের আইনি বাধার বিষয়টি বাংলাদেশ তুলেছে এবং তারা বলেছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। এছাড়া তারা বাংলাদেশি বিনিয়োগ স্বাগত জানায় বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, ভিসার মেয়াদের পরে বাংলাদেশি মুসলিমরা ভারতে অবস্থান করলে ২০০ শতাংশ জরিমানাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কনস্যুলার বৈঠক নভেম্বরে হবে।