জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তের কথা নিজেই জানেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- বিবিসি বাংলা
- প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০৫:৫৩ PM , আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০৫:৫৩ PM
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানেন না এসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার এক অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় তিনি নিজেই এ নিয়ে অভিযোগ করেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে চেয়ারম্যান করে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হলেও, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ের বাইরে আর কোন তথ্য কমিটির প্রধানকে জানানো হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই জাতীয় কমিটিতে যে সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে তার কিছুই কমিটির চেয়ারম্যানকে জানানো হয়না। কবে কারখানা খোলা হবে, কিংবা খোলা রাখা হবে কিনা, মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে, কখন রাস্তা খুলে দেয়া হবে বা বন্ধ রাখা হবে কিনা এসব বিষয়ে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হয় না বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি সারাদেশে কার্যত লকডাউনের মাঝে গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর আগেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
গত ৩১শে মার্চ কার্যত লকডাউনের সময়সীমা চৌঠা এপ্রিল থেকে বাড়িয়ে ৯ই এপ্রিল ঘোষণা করা হলেও এসময় যে সব ধরনের গণপরিবহনের চলাচলও বন্ধ থাকবে সেই সিদ্ধান্ত এসেছে চৌঠা এপ্রিলে। এই সিদ্ধান্তটি জাতীয় কমিটি থেকে আসেনি। পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন। এছাড়া, এই বর্ধিত ছুটি গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা সেই সিদ্ধান্তটি এসেছে দেরিতে। সারাদেশে যখন গণপরিবহন বন্ধ তখন হাজারও শ্রমিক চাকরি বাঁচানোর জন্য ঢাকামুখী হয়েছেন।
এ বিষয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধ রাখতে অনুরোধ জানান তৈরি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি রুবানা হক। শনিবার অর্থাৎ চৌঠা এপ্রিল রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি এই অনুরোধ জানান।
এর আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো 'গুজব' ছড়াচ্ছে কি না, তার তদারকি করতে আদেশ জারি করেছিল তথ্য মন্ত্রণালয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর সমালোচনার মুখে তা বাতিল করা হয়।
এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা যায়। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর 'লকডাউন' করার সিদ্ধান্ত নিয়েও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দিলেও পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক জানান তারা সেই চিঠি গ্রহণ করেননি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এ ধরণের অনুরোধ, আদেশ বা সিদ্ধান্ত এলেও সেগুলো এসেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের থেকে। এসব নিয়ে বিভ্রান্তিও কম হয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। শুধু দেশের সাংবাদিক না, বিদেশ থেকেও অনেক সাংবাদিকরা আমাকে ফোন করে। ফোনে ইন্টারভিউ নেয়, টেলিভিশনে যুক্ত করে। আমি তাদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারি না।’
‘অনেক সময় সাংবাদিকরা আমাকে দোষও দেয় যে আপনি যদি কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন, আপনি এই সিদ্ধান্তগুলো জানেন না কেন।’ বলেন মন্ত্রী। এসব বিষয়ে জাতীয় কমিটির থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও তাদের পরামর্শ বা মতামত নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত আমাদের থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শ তো করতে পারে। আমরা তাহলে আমাদের মতামতটা দিতে পারি।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত পহেলা মার্চ এই জাতীয় কমিটি গঠন করে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে ৩১ সদস্যের জাতীয় কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব; স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইউনিসেফ এবং ইউএস এআইডির প্রতিনিধিও এই জাতীয় কমিটিতে রয়েছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে জাতীয় কমিটির পর বিভাগীয় পর্যায়ে এমনকি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এসব কমিটি ভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় কমিটির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে থাকে। -বিবিসি বাংলা