সরকারি সহায়তায় ১৮ বছর পর দেশে ফিরে দেখলেন বাবা-মা আর নেই, স্ত্রীও অন্যের ঘরে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৮ PM
নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ ১৮ বছর পরে সরকারি সহায়তায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। দালালের খপ্পরে পড়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি। প্রথমদিকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ থাকলেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবারের সবাই মনে করেন তিনি মারা গেছেন। তবে ৭ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে দেখতে পান, তার বাবা-মা মারা গেছেন এবং স্ত্রীও এখন অন্যের সংসারে।
জাহাঙ্গীর আলম (৬৬), চরদিঘলদী ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে এবং পেশায় ছিলেন জেলে। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার জানান, ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করে জানান যে, এক বাংলাদেশি ব্যক্তি ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তার কাছে কোনো পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র নেই, এবং তিনি সুস্থ না থাকায় তার নাম বা পরিচয় জানানো সম্ভব হচ্ছিল না।
হাইকমিশন ওই ব্যক্তির ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করলে, দেশব্যাপী অনেকেই তার স্বজন দাবী করে যোগাযোগ করেন, তবে কেউই যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একসময়, নরসিংদী সদরের এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন যে, তিনি সম্ভবত চরদিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে পারেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সহায়তায় তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয় এবং জানা যায়, তিনি ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলম।
পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয় বলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে দ্রুত হাইকমিশনে পাঠান এবং জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি ব্যয়ে দেশে ফেরানোর অনুরোধ জানান। এর ফলে, ৭ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলম দেশে ফিরতে সক্ষম হন। তবে দেশে ফিরে তিনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তা অত্যন্ত করুণ। তার বাবা-মা আর জীবিত নেই এবং স্ত্রীও অন্য এক পরিবারে চলে গেছেন।
মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে জেলে বছরের পর বছর কাটানোর পর জাহাঙ্গীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন বা অঝোরে কাঁদেন। বর্তমানে তিনি নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উপজেলা প্রশাসন তার জন্য ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী প্রদান করেছে। এছাড়া, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
জাহাঙ্গীর আলমের বড় ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, 'আমরা বাবাকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত। তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া।" চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসা. সেলিনা আক্তার বলেন, 'আমরা তাকে কিছু অর্থ সহায়তা দিয়েছি এবং বর্তমানে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। আমরা চেষ্টা করব যাতে কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে এমন ভুল না করে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার সকলকে সতর্ক করেন, 'দালালের খপ্পরে পড়ে কেউ যেন জাহাঙ্গীর আলম বা তার পরিবারের মতো ভুল না করেন। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করলে এর ফলাফল পুরো পরিবারকে চিরকাল কাঁদাতে পারে।'