সেনাবাহিনীর সহায়তায়

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান থেকে ১৯ বছর পর দেশে ফিরলেন ময়নুল

বাংলাদেশি নাগরিক মো. ময়নুল হক
বাংলাদেশি নাগরিক মো. ময়নুল হক  © টিডিসি ফটো

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের আবেই অঞ্চল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর পর দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. ময়নুল হক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অসামান্য উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে তাঁর এই প্রত্যাবর্তন।ময়নুল হক গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের তালুক বাজিত গ্রামের রজ্জব আলীর ছেলে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ময়নুল এখন নিরাপদে নিজ বাড়িতে আছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরো বলেন, 'ময়নুলকে জীবিত ফিরে পাওয়া শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের জন্য এক অলৌকিক ঘটনা। আমরা ভেবেছিলাম সে আর ফিরবে না—কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সে সুস্থভাবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফিরেছে।' 

আইএসপিআর জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউএনআইএসএফএ (UNISFA) এ নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন–৩ (BANBAT-3) গত মে মাসে আবেই এলাকায় টহলের সময় ময়নুলের সন্ধান পায়। ২০০৬ সালে ঠিকাদারি কাজের জন্য সুদানে গিয়েছিলেন তিনি। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পালিয়ে আশ্রয় নেন আবেই অঞ্চলে—কিন্তু সেই সময় হারান পাসপোর্ট ও সব কাগজপত্র। এরপর দীর্ঘ ১৯ বছর আটকা পড়ে ছিলেন অচেনা দেশে।

বাংলাদেশ সেনাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর নিজের পরিচয় ও দুরবস্থা জানান ময়নুল হক। সেনারা তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করে। পরবর্তীতে সেনাসদরের মাধ্যমে বিষয়টি পাঠানো হয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

এরপর ইথিওপিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস গত ১৫ আগস্ট ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করে এবং ময়নুলের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বিবেচনা করে দূতাবাসই বহন করে বিমানভাড়া ও অন্যান্য খরচ।

গত ২৯ অক্টোবর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ময়নুল হক প্রথমে দক্ষিণ সুদানের জুবা, পরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন ময়নুল হক। তিনি বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম আর কোনোদিন দেশ দেখতে পাব না। সেনাবাহিনী ও সরকার আমার জীবনে নতুন আলো ফিরিয়ে দিয়েছে।'

আইএসপিআর জানায়, 'যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় আটক থাকা একজন বাংলাদেশিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারা সেনাবাহিনীর জন্য গর্বের বিষয়।'

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, 'দীর্ঘ ১৯ বছর পর একজন প্রবাসী নাগরিকের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে এক মানবিক সাফল্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে।'


সর্বশেষ সংবাদ