নানা সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দেশসেরা চক্ষু হাসপাতাল

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল  © টিডিসি ফটো

দেশের সবচেয়ে বড় চক্ষু চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারছে না। হাসপাতালের পরিচালক জানান, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি, বাজেট সংকট ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

শনিবার (৮ মার্চ) হাসপাতাল পরিদর্শনকালে এসব তথ্য জানা যায়।

হাসপাতালের দরজা পেরিয়ে করিডোরে ঢুকতেই নজর পড়ল দুই তরুণের দিকে। এক কোণে বসে আছেন তারা। চোখে-মুখে বিষণ্নতা ও ক্লান্তির ছাপ, যেন অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছেন। কাছে গিয়ে জানলাম, তারা এসেছেন কক্সবাজার থেকে।

জিজ্ঞেস করতেই একজন কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘হাফেজ মুর্শেদুল হক (২১) আমাদের বন্ধু।’ কথা বলার সময় তার কণ্ঠ ভারী হয়ে উঠল, যেন বুকের ভেতর চাপা কষ্টগুলো ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

কী হয়েছে, জানতে চাইলে অন্যজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘মুর্শেদুল হক দীর্ঘদিন ধরে অন্ধত্ব রোগে ভুগছে…এখন তার দুই চোখই সম্পূর্ণ অন্ধ।’

তারা বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পর থেকে ডাক্তাররা অত্যন্ত ভালোভাবে তাকে দেখাশোনা করছেন এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার অবস্থা মনিটর করছেন। এই মুহূর্তে মুর্শেদুল হককে কয়েকটি মেডিক্যাল টেস্ট দেওয়া হয়েছে। এসব টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে কী চিকিৎসা প্রয়োজন হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। তার বন্ধুদের মতে, হাসপাতালের সেবার মান ভালো এবং চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে রোগীর যত্ন নিচ্ছেন।’

কেরানীগঞ্জ থেকে চোখের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে এসেছেন মেহেদী হাসান (২৩)। তিনি বলেন, ‘আমার চোখে দাগ পড়েছে। তাই চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছি। আমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে। চোখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই হাসপাতাল অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় অনেক ভালো। তাই আমি এখানে এসেছি, যাতে সর্বোত্তম চিকিৎসা পেতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ভর্তি হওয়ার জন্য বেড দরকার। কিন্তু জানি না বেড পাব কি না। কারণ এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। 

হাসপাতালের সার্বিক বিষয় নিয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হাসপাতালটি বর্তমানে ২৫০ শয্যার। তবে এখানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়। ফলে হাসপাতাল ও কর্মী বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। যে কারণে মাঝেমধ্যে ভর্তি ও বেড সংকটের মতো সমস্যা দেখা দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করি, তা হলো “ডেক এস” পদ্ধতি। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে নির্দিষ্টভাবে ভর্তি করা হয়, যাতে ভর্তি ও বেড সংকট কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এই ব্যবস্থার ফলে হাসপাতালে রোগীদের সেবার মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে এবং চাপ কমানো যাচ্ছে।’

পরিচালক বলেন, ‘আমরা সীমিত জনবল নিয়েও সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। হাসপাতাল থেকে প্রতি বছর গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে এখানে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

এই প্রতিষ্ঠান শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় চক্ষু চিকিৎসাসেবা দিয়েছি এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। এ রকম উপজেলার সংখ্যা প্রায় ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। এ ছাড়া টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানেও চক্ষু চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যে চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে প্রদান করছি, বাইরে সেটি ৬০-৭০ হাজার টাকা লাগে। যা থেকে পরিসেবা প্রদানের খরচ এবং মানের মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ১০টি সাব-স্টেবিলিটির ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। কিন্তু সেগুলি ঠিকভাবে কার্যকর না হলে সেবা প্রদানে আরও সমস্যা দেখা দেবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence